শাহজাদপুর সংবাদদাতা॥
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীর চরে চাষ করা হচ্ছে উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি স্কোয়াশ। দেখতে শসার মতো মনে হলেও অতি পুষ্টিকর, সু-স্বাদু, উচ্চ ফলনশীল ও লাভজনক এই সবজি। ভালো লাভ হওয়ায় স্কোয়াশ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। কয়েক বছর আগে থেকে এ সবজি দেশে আবাদ হলেও ভোক্তার কাছে এর চাহিদা ব্যাপক। শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর রূপবাটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরজুড়ে চাষ হচ্ছে স্কোয়াশের। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখানকার স্কোয়াশ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
চরাঞ্চলের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্কোয়াশ চাষে বিঘাপ্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হলেও উৎপাদিত স্কোয়াশ বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ টাকা পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ২ হাজার ২০০টি গাছ আছে, প্রতি গাছে গড়ে ৩ থেকে ৪টি স্কোয়াশ রয়েছে। স্কোয়াশ চাষে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। এখন যমুনার চরে স্কোয়াশ আবাদ বেড়েছে। আগামী বছর আমি আরও বেশি পরিমাণ জামিতে স্কোয়াশ আবাদ করব।’
উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের চরধুনাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সরিষা আবাদে বিঘা প্রতি যে খরচ হয় একই খরচে সেখানে স্কোয়াশ চাষে তার তিন গুণ লাভ হয়। বীজ বপনের মাত্র ৪০ থেকে ৫০ দিনেই এ ফসল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি স্কোয়াশ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমরা চরাঞ্চলের কৃষকেরা স্কোয়াশ চাষে লাভবান হচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্কোয়াশের ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভেতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়। হেক্টর প্রতি স্কোয়াশ ফলন ৪৫-৫০ টন।’
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয়ের (সিরাজগঞ্জ) ঊর্ধ্বতন প্রশিক্ষক মোরসালীন জেবীন তুরিন বলেন, স্কোয়াশ বিদেশি সবজি। স্কোয়াশ দেখতে অনেকটা শসার আকৃতির। শসা ও মিষ্টি কুমড়ার মিশ্রণ (ক্রসিং করে) করে স্কোয়াশ নামে সবজি আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হচ্ছে।
মোরসালীন জেবীন তুরিন আরও বলেন, স্কোয়াশ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল রয়েছে। এটি কাচা ও রান্না দুভাবে খাওয়া যায়। খোসাসহ খেলে আরও বেশি উপকারী। ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীরা এই স্কোয়াশ খেলে বেশ উপকার পাবেন। স্কোয়াশের
উপকারিতা মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে, তাহলে এর চাহিদা আরও বাড়বে। এতে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। স্কোয়াশ-১ একটি বারি উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নার উপযোগী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, যমুনার চরে আবহাওয়া স্কোয়াশ আবাদের জন্য বেশ উপযোগী। চরে স্কোয়াশ চাষে খরচ হয় কম। বর্ষা শেষে চরের জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। তাই অল্প সময়ে স্বল্প বিনিয়োগে স্কোয়াশ চাষে যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকেরা ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন। স্কোয়াশ খেতে একদিকে সুস্বাদু অপরদিকে এই সবজিতে রয়েছে উচ্চ পুষ্টিগুণ। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে স্কোয়াশ আবাদ হয়েছে। চরাঞ্চলে স্কোয়াশের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।