মৌসুমের শুরুতে শীতের তেমন প্রকোপ না থাকলেও, জানুয়ারির শুরুতে হিমালয় থেকে আসা শৈত্যপ্রবাহে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। আবহাওয়া বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যা এখনও চলছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, সোমবার দেশের ছয় জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বইছিল। মঙ্গলবার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং সেই সঙ্গে টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছী ও দিনাজপুরে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ মৌসুমে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অনেক এলাকায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। দিন ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে শীতার্ত মানুষ। বিকালে শীতের তীব্রতা বেড়ে তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিম শীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
এ অবস্থায় আবারও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ সারা দেশের তাপমাত্রা কমে শীত আরও বাড়বে। আবহাওয়া দফতরে এ ব্যাপারে আপাতত কোনো সুখবর নেই। আগামী দু-তিন দিন পর শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে।
শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি এবং টনসিলাটাইসিসের সমস্যা। হাসপাতালে বাড়ছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। দেশজুড়ে প্রকৃতির দুর্ভোগে পড়েছে দিনমজুর শ্রেণি। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বেরিয়েও মিলছে না কাজ। এতে জনজীবনের পাশাপাশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, লালমনিরহাট এবং জয়পুরহাটে স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রকৃতির এই বৈরী আচরণের সময়ে মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়াতে হবে। সরকারের দেশের বিত্তশালী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে। তাদের মাঝে বিতরণ করতে পারে শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার। তাদের সহায়তায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পাশে আসুন সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই দরিদ্র শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে।