সমস্যার শেষ নেই ব্যবসায়ীদের। তারপরও কিছু গণমাধ্যম বিভিন্ন ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে চলেছে।
টিডিএস ডেস্ক॥
সমস্যার শেষ নেই ব্যবসায়ীদের। তারপরও কিছু গণমাধ্যম বিভিন্ন ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে চলেছে। অংশীজনরা বলছেন- অপতথ্য ও মনগড়া বক্তব্যে গুজব ছড়ানো সংবাদের ফলে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হওয়া মিডিয়া ট্রায়ালে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন। শুধু ব্যাংক নয়, মিডিয়া ট্রায়ালের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ১০টি ব্যাংক দুর্বল হওয়ার নেপথ্যে মিডিয়া ট্রায়াল এক ধরনের ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউর সূত্রের বরাত দিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে ‘৯ শিল্প গ্রুপে রিসিভার বসাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ওই প্রতিবেদনটি আরও কয়েকটি গণমাধ্যম অনেকটা হুবহু পরিবেশন করে। তবে বিএফআইইউ ওই সংবাদের সত্যতা স্বীকার করেনি। বিষয়টিকে মিডিয়া ট্রায়াল হিসেবেই দেখছেন অংশীজনরা। এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর উপ-প্রধান এ কে এম এহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএফআইইউ অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কোথাও রিসিভার নিয়োগ দিতে পারে না। রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বিএফআইইউ বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়নি।
ওই অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে বলা হয়- ব্যাংকের ঋণ আদায়ের জন্য ৯টি শিল্প গ্রুপে রিসিভার বসাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাদের মূল কাজ হবে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করা এবং সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা। তথ্য বলছে- আদালতের বাইরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির অপরাধ বিচার (জাজ) করাকে মিডিয়া ট্রায়াল বলে সম্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, এমন কোনো বেআইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা কোনো ব্যক্তির জীবন, সুনাম এবং সম্পত্তির ক্ষতির কারণ হয়। এ ছাড়াও দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তিকে অপরাধী বলা যাবে না। অংশীজনদের মতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই। সাংবাদিকতা হলো সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। সাংবাদিকতায় সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের বাইরে কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু মনে করেন, মিথ্যা তথ্যে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, মিডিয়াতে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হলে পুরো বিশ্বে ভুল বার্তা যায়। এতে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। তাই মিডিয়া ট্রায়ালে যেন কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হাসান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- পোশাকশিল্পের বাজার আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ওপর নির্ভর করে। পোশাকশিল্প প্রায়ই এক ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- ভুল তথ্য পরিবেশন করে বিগত সরকারের সময় ভুলনীতি তৈরি করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আমাদের রপ্তানিখাতে ভুল বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে অন্যায় করা হয়েছে। সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে- মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধে সাংবাদিকতার সব নীতিমালা মেনে চলতে হবে। একতরফা সংবাদ পরিবেশন অপসাংবাদিকতার শামিল। এতে ব্যবসায়ী ও ব্যবসা উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এ বিষয়ে বলেন, মিডিয়া ট্রায়াল হলো অন্যায় জিনিস। সেটা রাজনীতিতে হোক আর ব্যবসায় হোক।
প্রমানিত হওয়ার আগে কোন জিনিস প্রকাশিত হলে তখন পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। এটা কোনভাবেই কাম্য না। আমরা মানুষের আস্থার ওপর ব্যবসা করি। ব্যাংক, সাপ্লায়ার, লোকাল ক্রেতা, বিদেশি বায়াররা আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদের একটা ব্রান্ড ভ্যালু থাকে। এখানে মিডিয়ার ট্রায়াল হলে অনেকে বিশ্বাস করে ফেলে। মানুষ মিডিয়াকে গ্রহনযোগ্য মাধ্যম হিসেবে জানে। তখন দেখা যায় সেই ব্যবসাটা কোনো কারণ ছাড়াই মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরে দেখা গেল তার কোনো দোষ ছিল না। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে।