সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মানুষের জন্ম চাকরির জন্য নয়, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য: প্রধান উপদেষ্টা সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড সিরাজগঞ্জের ৫২৫ মণ্ডপে দুর্গা পূজার আয়োজন হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কমছে কৃষিজমি, বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও যমুনার পশ্চিম তীরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৯৯২ একর জমি সিরাজগ‌ঞ্জে শিশুদের জন্য আধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণ সম‌য়ের দা‌বি-মির্জা মোস্তফা জামান যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে

৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও যমুনার পশ্চিম তীরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৯৯২ একর জমি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২.৪৩ পিএম
৪ সেপ্টেম্বর ডিসি নজরুল ইসলাম যমুনা ইকো শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ক্রসবার-৩ এর কাছে উক্ত জমির একটি অংশে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন


স্টাফ রিপোর্টার॥



সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ক্রসবার-৩ ও ৪ নম্বরের কাছে স্থানীয়ভাবে চায়না বাঁধ নামে পরিচিত যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে ৯৯২ একরেরও বেশি জমি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মধ্যে সঠিক পরিকল্পনা এবং সমন্বয়ের অভাবে সরকারের ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই বিশালাকৃতির সম্পত্তি।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং কিছু ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরোধ এখনও নিষ্পত্তি না হওয়ায়, জমি নিয়ে জটিলতা দিন দিন গুরুতর আকার ধারণ করছে।
ভূমি বিরোধের বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার “সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদী থেকে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল সুরক্ষা এবং পুনরুদ্ধারকৃত জমির উন্নয়ন” নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যার জন্য ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এই প্রকল্পে প্রায় ১১৫৬ একর জমি ভরাট করা হয়।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব এবং প্রাক্তন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ সংশ্লিষ্টরা এত বড় অঙ্কের অর্থ অনুমোদনের পিছনে পরিকল্পনাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
প্রকল্পের আওতায় ৪.৬৮ বর্গকিলোমিটার জমির মাটি ভরাট করার জন্য ২৯৪.৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল, যেখানে ৩.২০ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষার জন্য ২০১.২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল।
এছাড়াও, একই প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি ৩ কি: মি: মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এভাবে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শুরু হওয়া এবং ২০২৩ সালে শেষ হওয়া প্রকল্পের মোট ৬৩৮.১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর, নয়টি মৌজার ১১৫৬ একর জমির মধ্যে প্রায় ৯৯২ একর জমি ব্যবহারের অভাবে মরুভূমির রূপে পরিনত হয়েছে।
পুঠিয়াবাড়ি, রায়পুর, বিয়ারা, ছোটপিয়াড়ি, বড়পিয়াড়িয়া, মোরগ্রাম, বেলটিয়া এবং রামগাতি নয়টি মৌজায় অবস্থিত ৯৯২ একর জমির মধ্যে প্রায় ৬৪৩ একর জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দাবি করা হয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসন এবং জমির মালিকদের মধ্যে নীরব বিরোধের সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে, জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠিতে ওই স্থানে একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য জমির সম্ভাব্য মূল্য হিসেবে ১০২৬,৩৭,৩১,৬৮৮ টাকা দাবি করে।
২০২২ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে একই উদ্দেশ্যে পাঁচটি মৌজা-পুঠিয়াবাড়ি, রায়পুর, বিয়ারা, ছোটপিয়াড়ি এবং বড়পিয়াড়ির ৩০১.০৯ একর জমির সম্ভাব্য মূল্য হিসেবে ১০৭৬,৮৯,৯০,৭৪১,২০ টাকা চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। একাধিকবার প্রাক্কলন পাঠানোর পরেও প্রস্তাবিত শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য বেজা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি, যা অভিজ্ঞমহলের হতাশার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বেপজা (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক জেলায় একটি শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সচিবের কাছে জমির তথ্য পাঠান।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ নবকুমার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় জমির বিশাল অংশ পড়ে থাকার কারণে অবৈধ দখলের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে মরুভূমির মতো জমি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে যদি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প পার্ক অথবা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, তাহলে তা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।”
এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর, ডিসি নজরুল ইসলাম যমুনা ইকো শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ক্রসবার-৩ এর কাছে উক্ত জমির একটি অংশে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা নিজেদের জমির মালিক দাবি করা কিছু লোকের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, ৮ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা প্রস্তাবিত স্থানে ভিত্তিপ্রস্তর এবং সাইনবোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদিও পরে ওগুলো পুনস্থাপন করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, “এখন জমির উপর আমাদের কিছু করার নেই। এটি এখন জেলা প্রশাসনের এখতিয়ারাধীন।”
শনিবার মুঠোফোনে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি শুনে ফোনটি কেটে দেন।
সিরাজগঞ্জবাসী উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার জন্য ওই স্থানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য তহবিল বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com