নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদকে সামনে রেখে রমজানের মধ্যে চলছে সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহ। ফলে সাধারণ ছুটির আওতায় বন্ধ সব ধরনের শপিং মল। ওষুধ ও কাঁচাবাজারের মতো মার্কেটগুলো খোলা থাকলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই নিজে গিয়ে পণ্য কিনতে চান না। কিন্তু রমজান মাস এবং ঈদকে সামনে রেখে জরুরি কিছু মার্কেটিং না করলেও চলে না। নাগরিক জীবনে এমন সঙ্কুল পরিস্থিতিতে আশা জাগিয়েছে ই-কমার্স।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে অনেকেই এই লকডাউন পরিস্থিতিতে নিজেদের সব ধরণের কেনাকাটা করতে ই-কমার্স সাইটগুলোর প্রতি ভরসা ও আস্থা রাখতে চান। অনেকেই এবারের ঈদের কেনাকাটার জন্য সম্পূর্ণ রূপে অনলাইন শপ ও ই-কমার্স সাইটগুলোর ওপর নজরও রাখছেন।
তেমনি একজন ইভানা পারভীন, জানালেন নিজের অভিজ্ঞতা। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও এলাকার এই গৃহবধু সব সময় প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইন থেকে কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি বলেন, অল্প সময়ে ভিড় এড়িয়ে বাজার বা কেনাকাটার জন্য সব সময় অনলাইনের ওপর নির্ভর করতে পছন্দ করি। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা ভালোই। কাপড় থেকে শুরু করে সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পন্যেই অনলাইন থেকে অর্ডার করে সংগ্রহ করি। এই কোভিড সিচুয়েশনে সেটা আরোও বেড়েছে। এবার ভাবছি ঈদের কেনাকাটাও অনলাইনের মাধ্যমে করবো। হয়তো ঈদের আগে সব শপিং মল খুলে দিবে। তবুও বাচ্চা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে ঈদের শপিংটাও অনলাইনে করবো বলে স্থির করেছি।
রাজধানী বাড্ডার কর্মজীবী নারী শাহরিনা হক আদর অনলাইনে কেনাকাটা করতে অভিজ্ঞ ও অভ্যস্ত। কোভিডের মধ্যে শপিংমলগুলো খুলে না দিলে এবারের ঈদ শপিং অনলাইনেই করবেন তিনি। এক্ষেত্রে ঈদের আগে ই-কমার্স সাইটগুলোতে আকর্ষণীয় ছাড়ে পণ্য কেনা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্বক্ষণিক অনলাইনে আসা পণ্যের বিজ্ঞাপনগুলো আমি দেখি, পছন্দ হলে অর্ডার করি। এতে সময় কম খরচ হয়। নিজের চাহিদা মতো পণ্যও পাওয়া যায়। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের ও পরিবারের জন্য ঈদ শপিং করবো অনলাইনেই। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন সাইটগুলো দারুন দারুন সব অফার দেয়, সেসব অফার কাজে লাগাতে চাই। এতে বাড়তি অর্থ খরচের ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে না।
চাকরিজীবী তরুণ ইফাদ রায়হান, থাকেন ধানমন্ডি পনেরো নাম্বার এলাকায়। নিজের পছন্দের সব ধরণের কাপড় অনলাইন থেকেই কিনতে পছন্দ করেন। এবারের ঈদের জন্য ইতিমধ্যেই অনলাইনে একটি ই-কমার্স সাইটে নিজের পছন্দের পোশাক অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। সময় মতো হাতেও পেয়ে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই অনলাইনের মাধ্যমে কিনে থাকেন সাভার এলাকার গৃহবধু শরিফা খাতুন আক্তারী। তবে ঈদের শপিংয়ের জন্য অনলাইন কেনাকাটার বিষয়ে তার আগ্রহ খুব একটা বেশি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ই-কমার্স সাইটগুলো বেশ প্রসারিত হয়েছে এটা সত্য। তবে পূর্ণাঙ্গ ঈদ শপিংয়ের জন্য এগুলো এখনো শতভাগ প্রস্তুত না। ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে যদি এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার কারণে সঠিক সময় সঠিক পণ্য ক্রেতা বুঝে না পায় তাহলে একটা অপ্রীতিকর ও খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যা মোটেও কাম্য নয়। সময় মতো পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অনেক উদাহারণ আছে আমাদের দেশীয় ই-কমার্স সাইটগুলোর। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নানা সীমাবদ্ধতা, সমালোচনা আর গ্রাহক চাহিদা আলোকে কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত? ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ( ই-ক্যাব)-এর সভাপতি শমী কায়সারের সাথে। তিনি বলেন, গত বছরের লকডাউনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারে আমাদের ই-কমার্স সেক্টর অনেকটাই পরিপক্ক। শুরুর দিকে নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে এবার ই-কমার্স সাইটগুলো গ্রাহকদের সুবিধা মাথায় রেখে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক ই-কমার্স সাইট এই লকডাউনে খুবই অল্প সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ঢাকার যে কোন প্রান্তে পৌছে দিচ্ছে। তাছাড়া চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে টিসিবি’র থেকে নিয়ে ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল বা তেলের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌছে দেবে গ্রাহকদের কাছে। এদিকে ওষুধ, ফ্যাশন ওয়্যার বা ইলেকট্রনিক্স পণ্যও চাহিদা মতো গ্রাহকদের কাছে সীমিত সময়ের মধ্যে পৌছে দেওয়ার মতো দ্রুত ডেলিভারি ব্যবস্থাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
ই-কমার্স সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে ক্রেতারা ক্রমশ অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। করোনাকালীন সময়ে যারা ঘরে বসে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা সবদিক বিবেচনা করেই ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। পরিস্থিতি কারণে মার্কেটিং কালচারে অনেক বদল এসেছে এবং মানুষ অন-লাইনে কেনাকাটা ঝুঁকছেন।
উল্লেখ্য, এক হিসেব অনুযায়ী এখন দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রায় দেড় হাজার ই-কমার্স ফার্ম রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুকভিত্তিক প্রায় এক লাখ এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন বিপুল অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কমপক্ষে গড়ে এক লক্ষাধিক পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি করা হয়।