রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

অলংকার হিসেবে নয় যোগ্যরাই হোক সংরক্ষিত আসনে এমপি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪, ৫.৫৮ পিএম
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

মোস্তফা হোসেইন

মার্চের মধ্যেই সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নতুন মুখ আসছে। সংরক্ষিত নারী আসনে আইনগত কোনো পরিবর্তন হয়নি, তারপরও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে তাদের নিয়ে। পরিবেশটাও নতুন। ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন শেষ হলেও এখনও খোলাসা হয়নি কিভাবে এবং কে কে হতে যাচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। এদিকে এমপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ চলছে তলে তলে।

১২টি সংসদের মধ্যে এবারই সর্বাধিক স্বতন্ত্র সংসদ নির্বাচিত হওয়ায় নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের পদধারী হওয়ায় এবং তারা এখনও জোটভুক্ত না হওয়ায় অন্তত ১০ জন এমপি কিভাবে নির্বাচিত হবেন তা ঝুলে আছে। যেহেতু ৬২জন স্বতন্ত্র এমপির মধ্যে ৫৮জনই আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের কাউকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি,তাই কেউ কেউ মনে করছেন তাদের কোটায় যারা নির্বাচিত হবেন সেটাও আওয়ামী লীগই নির্ধারণ করে দেবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন,স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ নিজেদের প্রভাব তৈরির জন্য নিজেরা জোটভুক্ত হয়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু এমন হলে দলের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়ার বিষয়টি আছে। ফলে আওয়ামী লীগ কি চায় এই বিষয়টিও জড়িয়ে আছে স্বতন্ত্রদের কোটায় নির্বাচনের বিষয়টি।

আওয়ামী লীগ কি স্বতন্ত্রদের স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকে স্বাগত জানাবে? তাদের কি স্বাধীনতা দেবে এমপি মনোনয়ন/নির্বাচনের জন্য? আবার স্বতন্ত্র সদস্যগণও যে জোটভুক্ত হবে এমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে স্বতন্ত্র এমপিদের কয়েকজনই শুধু এটুকু বলেছেন, জোট গঠন বিষয়ে তাদের কেউ কোনো প্রস্তাব দেননি। যদিও ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদ্স্য এবং দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেছেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা স্থির করা হবে। যদিও তার এমন বক্তব্যও পরিষ্কার করে না আসলে তারা কি করতে চান।

জাতীয় পার্টি তাদের দুটি আসনে কিংবা আওয়ামী লীগ তাদের ২২৩ টি আসনের বিপরীতে ৩৭টি আসনে মনোনয়ন দেবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের বিপরীতে যে ১০জন এমপি হবেন তাদের বিষয়ে।

আওয়ামী লীগ এখনও এই ৬২ কিংবা ৫৮ আসন বিষয়ে এখন স্পষ্ট কিছু বলেনি।

৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেসন বসবে। শুরুতে আসন শূন্য থাকার সম্ভাবনাই স্পষ্ট। আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন করতে হয়। সেই অনুযায়ী ৭ এপ্রিলের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কিন্তু এর আগেই ফয়সালা হতে আইনে কোনো বিপত্তি নেই।

৬২জন স্বতন্ত্র এমপি জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ৬জনের জোট গঠনের বিষয়টি এখনও অসম্ভব মনে হচ্ছে না। ৬২ জনের মধ্যে অন্তত ২/৩টি জোট হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। স্বতন্ত্র এমপিদের সামনে সময়ও আছে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে তারা নির্বাচন কমিশনকে তাদের জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করবেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রায় সবাই যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা, তাই তারা স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত না নিয়ে যে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করবেন এই সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সদস্যদের বাদে ৪৮টি এমপি পদই আওয়ামী লীগের পছন্দ অনুযায়ী হতে পারে এমনটাও অসম্ভব নয়।

একসময় ৩০ সেট অলঙ্কার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো সংরক্ষিত আসনের এমপিদের। যুগ বদলে গেছে ইতোমধ্যে। নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে এখন। তাই শুধু অলংকার হিসেবে নয় যোগ্যদেরই সংসদে পাঠানো হোক, এমন প্রত্যাশা বেশি হবে বলে মনে হয় না।

এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য অনেকের নামই প্রকাশ হচ্ছে। সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা-চেতনাপ্রসুত অতীত উদাহরণ থেকেই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাধারণত দলের প্রতি কমিটেড নারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে সামাজিক অবস্থানকেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে, যেখানে দলের ভিতকে আরও মজবুত করতে পারে তাও বিবেচনায় আসে।

দ্বাদশ সংসদে এমপি পদের প্রার্থী মনোনয়নকালেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। দলের প্রয়াত নেতা যাদের অবদান অনেক, তেমন নেতাদের উত্তরাধিকারীদের মূল্যায়ন করার উদাহরণও আছে আওয়ামী লীগে। এসব বিবেচনায় অনেক আসনে সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা সবাই জানে। সংরক্ষিত নারী আসনে কারা প্রাধান্য পাবেন সেই হিসাবটা এভাবেই আসলে করা হচ্ছে।

যেমন সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সরাসরি নির্বাচন করতে মনোনয়ন পাননি। তিনি দলীয় আনুগত্য প্রমাণে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হননি। দল তাকে নির্বাচন পরিচালনার কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করে। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তারানা হালিম আবারও সংসদে যেতে পারেন এমন ভাবনা অনেকের মধ্যেই আছে।

স্বৈরাচার সরকার আমলে নিহত ময়েজউদ্দীনের কন্যা মেহের আফরোজ চুমকীকে মনোনয়ন দেওয়ার পরও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের কাছে হেরে গেছেন। দলীয় পছন্দে তিনি আবার সংসদে ফিরে আসতে পারেন এমনটাও আলোচনা হচ্ছে। শিল্পী মমতাজকে মনোনয়ন দেওয়ার পরও তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। শিল্পী হিসেবে তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টিও অনেকের চিন্তায় আসছে।

অন্যদিকে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন অভিনয় শিল্পী ফেরদৌস, ক্রিকেটার মাশরাফী এবং শাকিব। সুতরাং শিল্পী এবং ক্রীড়াবিদ এর মতো সৃজনশীল কাউকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না এমন মন্তব্যও কেউ কেউ করছেন। সেক্ষেত্রে শমি কায়সার কিংবা রোকেয়া প্রাচীর সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়টি এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়ছে।

আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কর্মী হিসেবে নজর কেড়েছে এমন নেতা-কর্মীদের অনেকের নামই সম্ভাব্যদের তালিকায় আসছে। তবে বিগত সংসদগুলোতে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের ভূমিকাগুলো পর্যালোচনা হবে এমনটা আশা করা যায়।

একসময় ৩০ সেট অলঙ্কার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো সংরক্ষিত আসনের এমপিদের। যুগ বদলে গেছে ইতোমধ্যে। নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে এখন। তাই শুধু অলংকার হিসেবে নয় যোগ্যদেরই সংসদে পাঠানো হোক, এমন প্রত্যাশা বেশি হবে বলে মনে হয় না।

লেখক : সাংবাদিক,শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com