এফবিডি ডেস্ক॥
পুঁজিবাজারে করোনাকালের করুণ চিত্র ফিরে আসার পর বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি। তারা তহবিলের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও চাইছে নতুন করে বিনিয়োগ হোক। এতে করে বাজারে লেনদেনের খরা কাটবে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এগিয়ে এলে সাহস পাবে অন্যরাও।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় দুনিয়াজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে যে উদ্বেগ, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। বিশ্ববাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে রিজার্ভে যে টান পড়েছে, সেটি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর পুঁজিবাজার মাস দুয়েক চাঙা থাকলেও গত দুই মাস ধরে তা ক্রমেই নিম্নমুখী। ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে যেমন কোম্পানির শেয়ারের দর তরতর করে বাড়ছিল, এর মধ্যে সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইস বা আশপাশের দরে নেমেছে।
শক্তিশালী বহু কোম্পানি, যেগুলো বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের দারুণ মুনাফা দিয়ে আসছে, সেগুলোর শেয়ারেরও ক্রেতা নেই। এখন আলোচনা হচ্ছে, ফ্লোর প্রাইসের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
যে বাজারে কিছুদিন আগেও দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, সেখানে এখন তা নেমেছে তিন শ কোটির নিচে। চাঙা পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানিতেই প্রায় সমপরিমাণ লেনদেন দেখা গেছে গত সেপ্টেম্বরেই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের মতে, দেশের সামগ্রিক আর্থিক যে পরিস্থিতি, তার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অভাবকেও দায়ী করেছেন। বলেছেন, এখানে বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৯০ শতাংশ ব্যক্তি বিনিয়োগকারী।
নানা সময় দেখা গেছে এসব ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা গুজব গুঞ্জনে শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন দাম বাড়তে থাকে, তখন আরও বাড়বে আশায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে। আবার যখন কমতে থাকে তখন আরও কমে যাবে ভেবে শেয়ার বিক্রি করে পয়সা হারায়। এই পরিস্থিতিতে বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
এর মধ্যে বিএসইসি যোগাযোগ করেছে আইসিবির সঙ্গে। পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে যে তহবিল করা হয়েছে, সেখান থেকে অর্থ দেয়ার কথা রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানিকে জানিয়েছে তারা।
এই তহবিল ছাড়াও জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে তহবিলের জন্য আলোচনা চালাচ্ছে আইসিবি। তবে এখন পর্যন্ত দুই ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি জনতা ও রূপালী ব্যাংক থেকে কিছু টাকা পাওয়ার জন্য। দুই ব্যাংকের এমডির সঙ্গেই কথা হয়েছে। এখনও তারা নিশ্চিত করেনি। তবে আশা করছি, দ্রুতই টাকা আসবে। আর ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। এটা নিশ্চিত করেছে তারা।’
সিএমএসএফ কত টাকা দেবে এবং মোট কত টাকা বিনিয়োগ করা হবে তার পরিমাণ জানাননি আইসিবির এমডি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন বলা যাচ্ছে না।’
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বা সিএমএসএফ যে টাকা দেবে, সেটি ঋণ হিসেবে দেয়া হবে বলেও জানান আইসিবি এমডি।
বিএসইসির একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘আইসিবি বিনিয়োগ করবে। এর জন্য সিএমএসএফ টাকা দেবে। জনতা ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে আইসিবির। সেটা আমাদের জানানো হয়েছে।’