রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা আড়াই মিনিট

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ২.০৬ পিএম
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি॥

একসময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে শাহ আমানত সেতু হয়ে সড়কপথে শহরে আসতে সময় লাগতো অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এখন সেই পথ ও সময় কমিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি এই টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে প্রবেশ করে পতেঙ্গা প্রান্তে আসতে সময় লাগছে মাত্র দুই থেকে আড়াই মিনিট।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ‘দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন’ অনুষ্ঠান করা হবে। আশা করা হচ্ছে, গাড়ি চলাচলের জন্য আগামী বছরের জানুয়ারিতে এই টানেল খুলে দেওয়া হতে পারে। ‘দক্ষিণ  টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন’ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টানেলটি নির্মাণ করছে।

সেতু বিভাগ জানায়, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।  দুটি টিউব তিনটি সংযোগপথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপৎকালীন সময়ে অন্য টিউবে যাতায়াতের জন্য এই ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহৃত হবে। কিছু দূর পর পর টানেলের দেয়ালে এই ক্রস প্যাসেজের দূরত্ব নির্দেশনা লেখা আছে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিমি. এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

৩ দশমিক ৩২ কিমি দীর্ঘ টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির কাছ থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা-সিইউএফএল এবং কর্ণফুলী সার কারখানার-কাফকো’র মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে। মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা প্রান্তে শূন্য দশমিক ৫৫০ কিমি.  ও আনোয়ারা প্রান্তে ৪ দশমিক ৮ কিমিসহ মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়াল সড়ক রয়েছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) টানেলের কাজ পরিদর্শনে এসে জানান, আগামী জানুয়ারির শেষে যান চলাচলের জন্য বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেওয়ার আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে একটা নতুন দিগন্ত সূচনা করেছি। আমরা খুব আনন্দিত ও উদ্ভাসিত। শনিবার দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হওয়ার জন্য একটা উদযাপন হচ্ছে। সেখান প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হবেন। পরবর্তী সময়ে যখন পুরো কাজ সমাপ্ত হবে, আমরা যান চলাচল শুরু করবো, তখন তিনি উদ্বোধন করবেন।’

আহমেদ কায়কাউস আরও বলেন, ‘এই টানেলের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে। শুধু এখন ফিনিশিং ওয়ার্ক চলছে। যেহেতু একটা টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেটার উদযাপন করছি। ঈদের আগে যেমন চাঁদরাত উদযাপন করি, এখন সেই চাঁদরাত এখানে।’

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল আমাদের জন্য একটা অলৌকিক মুহূর্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল—যেটা নদীর নিচ দিয়ে গেছে এবং একপ্রান্তে পতেঙ্গা ও আরেক প্রান্তে আনোয়ারাকে সংযুক্ত করেছে, সেই টানেলের দুটো টিউবের দক্ষিণ টিউব যেটি, সেটির পূর্ত কাজের সমাপনী উদযাপন করবো আমরা। এখনও ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজগুলো বাকি রয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর টিউবের পূর্ত কাজ কিছুটা বাকি আছে। আমরা জানুয়ারি মাসের শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেবো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com