সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

আবাসন শিল্প এগিয়ে প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থানে

  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯.৪৭ এএম
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

দেশের অর্থনীতিতে আবাসন শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এ শিল্পটি একদিকে যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার- মাথা গোঁজার ঠাঁই নির্মাণ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি এ আবাসন শিল্প দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শুধু তা-ই নয়, এ শিল্পটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে আরও শতাধিক সহযোগী শিল্প। এসব শিল্পের মাধ্যমেও কর্মস্থান হয়েছে আরও লাখ লাখ বেকারের।

সব মিলে আবাসন শিল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে। জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান ১৫ শতাংশ। এ খাত থেকে সরকার ট্যাক্স, ভ্যাট, রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ প্রচুর রাজস্ব পায়। অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে অবশ্যই আবাসন খাতে গতি আনতে হবে। সমগ্র নির্মাণ খাতে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। তাদের ওপর নির্ভর করেই প্রায় আড়াই কোটি নাগরিকের অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা পূরণ হয়।

এই খাতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। এভাবে বাংলাদেশে আবাসন খাত গত প্রায় ৪০ বছর ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামোগত উন্নয়নকে অর্থনীতির উন্নয়নের মূল সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এ অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিস্তৃতি বিশাল। রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ও পরিবহন সেক্টরের সমস্যা সবই এই বিভাগের অধীন।

রিয়েল এস্টেট বা হাউজিং শিল্পও এই অবকাঠামোগত শিল্পগুলোর মধ্যে একটি। নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এই সেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। সব শিল্প থেকেই এই গ্রোথ প্রত্যাশিত হলেও অনেক শিল্পই আশানুরূপ ফল পায় না। এককথায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে আবাসন খাতের দ্বারা। এ শিল্পের চালিকাশক্তি কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সম্পত্তির মূল্য, সুদের হার, সম্পত্তির চাহিদা, নগরায়ণ ইত্যাদি। আবারও এই শিল্পটি সিমেন্ট, ইস্পাত, টাইলস, স্যানিটারি, গ্লাস এবং অন্যান্য বিল্ডিং উপকরণ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গেও জড়িত। আবাসন শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে এ পণ্যগুলোর চাহিদাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই রিয়েল এস্টেট সেক্টরের উন্নয়ন অন্যদের উন্নয়নে পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবেও কাজ করে।

রিয়েল এস্টেট সেক্টর গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ সময় দ্রুত নগরায়ণ এবং  অস্বাভাবিক জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয়েছে। ফলস্বরূপ, আবাসন খাতের চাহিদাও বেড়েছে অতি দ্রুত। রিহ্যাবের হিসাব মতে ২০১৪ সালে এ সেক্টর জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশ যা আগের বছরেও ছিল ৭.০৪ শতাংশ। এখন জিডিপিতে অবদান বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ।

জাতিসংঘের করা জরিপ অনুসারে দেশের ৪০ শতাংশ এলাকা নগরায়ণের আওতায় চলে আসছে। আর অধিক নগরায়ণের অর্থই হলো আবাসনের চাহিদা বৃদ্ধি। তাই রিয়েল এস্টেটের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে। এ ছাড়া সামাজিকভাবেও আমাদের দেশ ভিন্ন ধরনের একটি সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাই ফ্ল্যাট এবং অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

এ ছাড়া দেশে বাড়ছে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা। আর এমন মানুষ প্রতিনিয়ত খোঁজ করছে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই। সব দিক ভেবেই বলা যায় এদেশে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে। শিল্প বাণিজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে নগরায়ণ। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ নগরবাসী ছিল।

জাতিসংঘের তৈরি ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাস : দ্য রিভিসন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশ্বের ষষ্ঠ জনবহুল নগরী। লোকসংখ্যা হবে ২ কোটি ৭০ লাখ। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ফলে বর্ধিত নগরায়ণে বিপুল জনস্রোতের বিপরীতে বদলেছে শহরের ধরন, গড়ন ও পরিধি।

কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকাই নয়, একই কারণে অবকাঠামো ও পরিধিগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের ব্যাপ্তিও। বাড়তে থাকা নাগরিকের ক্রমবর্ধমান আবাসন সমস্যা নিরসনে আবাসন শিল্প এগিয়ে এসেছে। নগরায়ণের ক্রমাগত চাপকে সামাল দিতে নাগরিক জীবনমান নিশ্চিতকরণ, পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা ও আবাসন পরিকল্পনা নিয়ে দেশের আবাসন খাত হেঁটেছে সমান গতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা, পুঁজির সঠিক বিনিয়োগ ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, উন্নত আবাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আবাসন খাতে কয়েক দশকের পরিবর্তন এক কথায় চোখে পরার মতো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে ‘সবার জন্য আবাসন’ নীতি আবাসন খাতের সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখবে। সরকারের আবাসন খাত সহায়ক নীতি সহায়তা, পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনায় উন্নত আবাসনের ছোঁয়া দেশের প্রত্যন্ত পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন অনেকেই।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের উপরে ছিল এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। কোভিডকালেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬.৯৪ শতাংশ ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ধলা হয়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় আবাসন খাত প্রতিবছর জিডিপির এই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিসংখ্যান বলছে মোট দেশজ জিডিপির ৭ শতাংশ আসে সরাসরি রিয়েল এস্টেট খাত থেকে। এ ছাড়াও এ খাতের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাকআপ লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিসহ জিডিপিতে মোট অবদান ১৫ শতাংশেরও বেশি। সম্ভাবনাময় এ খাতের সঙ্গে জড়িত আছে ২১১টি থেকে ২৬০টি সংযুক্ত খাত।

বর্তমানে আবাসন খাত দেশের সার্বিক শিল্পোন্নয়নে অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর তাই অব্যাহত এ অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে কখনো যৌথ উদ্যোগ, কখনো ব্যক্তি উদ্যোগকে সহায়তা করেছে রাষ্ট্র। নীতি সাহায্য থেকে শুরু করে দ্রুত বর্ধমান এ খাতকে নানামুখী পদক্ষেপ এ খাতের অব্যাহত প্রবৃদ্ধির ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়তা করে চলছে।

নব্বই দশকের শুরুতে শহরমুখী জনস্রোত, শিল্প-বাণিজ্য উদারীকরণ ও তেজি অর্থনৈতিক প্রবণতায় শুরু হয় অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, রেডি প্লট বিক্রয়, বৃহদাকায় আবাসন পরিকল্পনার। উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত ও সচ্ছল মধ্যবিত্ত অনেকেই সে সময় আগ্রহী হয় আধুনিক আবাসন ব্যবস্থায় সংযোজিত হতে। ক্রমশ দেশে করপোরেট ব্যবসার সম্প্রসারণ, গার্মেন্টস খাতে অগ্রগতি এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিস্থিতিতে শহরের আবাসন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। বাড়ে ক্রেতা এবং এ খাত থেকে সরাসরি সুবিধাভোগীর সংখ্যা। অনেকেই নিজের পুরোনো ভবন বদলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে আবাসন শিল্প বিশেষত বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে জোয়ার দেখা যায়।

দ্রুত নগরায়ণের ফলে জমির ওপর চাপ বেড়েছে দিন দিন। এরই এক অনিবার্য ফসল আবাসন খাত। বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসার বয়স এখন ৪০ পেরিয়ে গেছে। দেশের বেসরকারি আসান খাত মোট নগর আবাসনের অর্ধেকটা মেটায়। ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে আবাসন ব্যবসা বড় আকারে শুরু হয়। আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান রিয়াল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯১ সালে। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র ১১। রিহ্যাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন এর সদস্যসংখ্যা ৯১১।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com