স্টাফ রিপোর্টার॥
দেশে দিনদিন অনলাইন ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা যুগিয়েছেন হাজার হাজার ই-কমার্স ও এফ-কমার্স উদ্যোক্তা। আবার ঘরে বসেই পণ্য পাওয়ার সুবিধা নিতে অনলাইনে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন ক্রেতারাও। সব মিলিয়ে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের একটি বড় অংশ ফেসবুক ও ইউটিউবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনলাইন ব্যবসা করেন এমন উদ্যোক্তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। টানা ৫ দিন পর ব্রডব্যান্ড এবং ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট এলেও এর ধীরগতি ভোগাচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
এছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো এখনো চালু হয়নি। ভিপিএন দিয়ে বিকল্প উপায়ে কেউ কেউ ফেসবুক চালালেও তাতে কাঙ্ক্ষিত রিচ হচ্ছে না। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্তত কয়েক মাস পিছিয়ে গেছেন তারা।
ঘরোয়া খাবার তৈরি ও বিক্রি করেন হ্যালো ফ্রম নূর’স কিচেন- ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন নূর এ মেহজাবিন। ইন্টারনেটে ধীরগতি ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই উদ্যোক্তা। মেহজাবিন বলেন, আমার টার্গেট থাকে প্রতি মাসেই সেল আগের মাসের তুলনায় বাড়ানো। দেশের এই অবস্থা আমার বিজনেসে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রিচ কমে গেছে, পোস্ট দিলেও রিচ বাড়ছে না। আগের রিচে ফিরিয়ে আনতে অন্তত এক মাস প্রচুর খাটতে হবে।
একই তথ্য জানিয়েছেন অনলাইনে পোশাক বিক্রির প্রতিষ্ঠান মেহনাজ কালেকশনের কর্ণধার আজনুভা মেহনাজ, কম্বোওয়ালি ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন নাবিলা ইসলামসহ অনেকেই।
এদিকে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ে গড়ে তোলা ফেসবুক গ্রুপগুলোও গত ১০ দিনে নিজেদের অবস্থান হারিয়েছে। সক্রিয় না থাকার কারণে ফেসবুক সয়ংক্রিয়ভাবে পেইজগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমিয়েছে। একই সঙ্গে কিছুদিন আগেও নিয়মিত সক্রিয় ক্রেতাদের অনেকেই ফেসবুকে আসতে পারছেন না। ফলে ইন্টারনেট চালু হলেও এখনো থমকে আছে অনেকের ব্যবসা।
অনলাইনে হোম ডেকর প্রোডাক্ট বিক্রির প্রতিষ্ঠান নন্দিতা কুটির জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার অবস্থায় তাদের পেইজে ক্রেতা সমাগমের জন্য বুস্ট চলছিল। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুস্ট চলমান ছিলো। কিন্তু দেশের কেউ ইন্টারনেট না পাওয়ায় ক্রেতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
নন্দিতা কুটিরের পরিচালক ইসরাত লামিয়া বলেন, ইন্টারনেট চালু হলেও ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। দেশের কেউ ইন্টারনেট না পেলেও ফেসবুকের কাছে এটা একটা ফ্যাক্ট। ফলে আমাদের পেইজের রিচ এখন কম। ইন্টারনেট এলেও ফেসবুক খোলেনি। এতে ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের জন্য এটা অপূরণীয় ক্ষতি।
অনলাইনে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করেন মো. ফারুক। তিনি বলেন, ইভ্যালি আর ই-অরেঞ্জ তো আমাদের শেষ করে দিয়ে গেছে। ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে কিছুটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। সেখানেও বাধা! এভাবে চললে উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। আমরা তো সরকারের কাছে চাকরিপ্রত্যাশী না। নিজেরা কিছু করতে চাচ্ছি। ইন্টারনেট সেবা ও ফেসবুক ঠিক রেখে আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।