টিডিএস ডেস্ক॥
এবারের দূর্গাপূজায় পাতে ইলিশ থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। এর কারণ হল, বিশ্বের বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ, প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ পাঠানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার।
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেছেন, দেশের ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করার জন্য ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকবে।
ইলিশ নিয়ে নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে ফরিদা আক্তার ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) কে বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অনেক মাছ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে। এবার আমরা ইলিশকে সীমান্ত পার হতে দেবো না।
ফরিদা আক্তার আরো বলেন, বিদায়ী সরকার দুর্গাপূজার সময় ইলিশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতো। তারা বলতো এটা ভারতের জন্য তাদের উপহার। আমি মনে করি না এইবার আমাদের উপহার দেওয়ার কোনো দরকার আছে। ভারতে প্রচুর পরিমাণে রফতানি করার অনুমতি দেওয়া হলে আমাদের লোকেরা মাছ খেতে পারবে না।
ফরিদা আক্তার মূলত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত ‘ইলিশ কূটনীতির’ প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন। হাসিনা সরকারের আমলে বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমগুলোতে ভারতে বিপুল পরিমাণ মাছের চালান পাঠানো হয়েছে। হাসিনা একাধিকবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছেও ইলিশ পাঠিয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জিকেও ৩০ কেজি ইলিশ উপহার দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে নজিরবিহীন ছাত্র বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট নাটকীয়ভাবে শেখ হাসিনার পতনের পর ইলিশ মাছের ঐ কূটনীতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এবার ভারতে ইলিশ না পাঠানোর কারণ হিসেবে এই মাছটির বেশি ধরা না পড়া, খারাপ আবহাওয়া এবং স্থানীয় বাজারগুলোতে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে নতুন সরকার।
নতুন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ইলিশ সরবরাহের অনুমতি দিয়ে ভারতের প্রতি শুভাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করতে পারতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিসেস আক্তার বলেন, অন্য সব উপায়ে তাদের প্রতি আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষা থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু। কিন্তু আমাদের জনগণকে বঞ্চিত করে কিছু করা উচিত নয়। শুভেচ্ছার প্রশ্ন এর থেকে আলাদা।
বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইলিশ মাছের প্রধান উৎপাদনকারী দেশ। বঙ্গোপসাগরসহ বাংলাদেশের নদীগুলোতেও এই মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরেন এবং এই মাছের বেশির ভাগটাই আসে সমুদ্র থেকে। বিগত বছরগুলোতে সরকার দুর্গাপূজার সময় বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু দেশে মাছের সংকটের কথা বিবেচনা করে এ বছর ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালে, ইলিশ দেশের একটি ভৌগলিক নির্দেশক হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল।
এদিকে রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও ইলিশের দাম কমাতে পারছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি।
নিষেধাজ্ঞার পরও স্থানীয় বাজারগুলোতে এই মাছটির দাম বেড়েছে। একটি দেড় কেজি ইলিশ প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশের দাম কেজিতে ১৫০শ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি পড়ছে। সরবরাহ কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
সীমান্তের দুই পাশের বাঙালিদের কাছে ইলিশ এমন এক মর্যাদা অর্জন করেছে এর স্বাদ একবার না নিতে পারলে অনেকেই হতাশ হয়ে যাবে।
মাছটি তার বহুমুখী গুণাগুণের জন্য উৎসব উদযাপনে খুব সমাদৃত হয়। বিভিন্ন উপায়ে রান্না করা এই ইলিশ স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। সর্ষে বাটা দিয়ে ভাপা ইলিশ এর সূক্ষ্ম স্বাদ যেমন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, তেমনি মশলার হালকা প্রলেপ দিয়ে ভাজা মুচমুচে ইলিশের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত বাঙালির রসনা বিলাসকে পরিতৃপ্ত করে।