নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে আর আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব উপজেলার মানুষের সহায়তায় সাড়ে ১৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি বিকেল ৪টা নাগাদ পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওড়িশা অতিক্রম করবে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির আঘাত হানার কোনো সুযোগ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে ১৪টি উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বা বাঁধ ভেঙে যেসব মৎস্য ও কৃষিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মৎস্যজীবী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
“যাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সরবরাহ করা হবে।”
এনামুর রহমান বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।
তারা ও স্থানীয় প্রশাসক মিলে নিম্নাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল থেকে আগেই মানুষকে সরিয়ে এনেছিল।”
আশ্রয়কেন্দ্র এবং মানবিক সহায়তার যথেষ্ট সংস্থান আগে থেকেই করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যথেষ্ট মাস্ক এবং স্বাস্থ্য উপকরণ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসক, উপজেলার নির্বাহী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে।
বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আছে। সেটার সভা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যদি কোনো বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে পনি সম্পদ মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে। সাথে সাথে সারিয়ে ফেলার জন্য তারা কাজ করবে।”
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যে যে জেলায় বাঁধ ভেঙে গেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।“
“আমরা তথ্য পেয়েছি অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত বা পুননির্মাণের কাজ চলছে।”
নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখন যে বাঁধগুলো আছে সেগুলো ষাটের দশকের। এগুলো সংস্কার করলে খুব একটা লাভ হবে না।
নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় একটা মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। কারণ আমি নিজেও ভিজিট করে দেখেছি বাঁধগুলো সরু হতে হতে জমির আইলের (আল) মত হয়ে গেছে।
“তাছাড়া বেশিরভাগই হচ্ছে মাটির বাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে দুর্যোগ বেড়েছে, মাটির বাঁধ দিয়ে তা রক্ষা করা যাবে না।“
উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা এবং পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নে ডেল্টা প্লানে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেজন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।