শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সাবেক এমপি মমিন মন্ডলের পিএস সেলিম গ্রেফতার স্বামী-সন্তানসহ হেনরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এনায়েতপুর থানা লুট, পুকুর সেচে মিলল অস্ত্র সিরাজগঞ্জে ৫০৩ মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূঁজা: প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা সিরাজগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে ৯২ কেজি গাঁজাসহ ২ জন আটক ১০৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী সরকার সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা ছাড়া কাজ দেওয়া হবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা গুলি করার হুমকি দিয়ে কৃষকের ৭ গরু চুরি সংস্কার চলা দেশের ব্যাংকিংখাতে সহায়তার আশ্বাস বিশ্বব্যাংকের

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে হাতে ভাজা মুড়ি

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ২.২৯ পিএম
ছবি: সংগ্রহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা॥

হাতে ভাজা মুড়ি হলো বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। বছরজুড়ে কমবেশি এই মুড়ির কদর থাকলেও রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যেতো কয়েকগুণ। বর্তমানে মানুষের আধুনিক জীবনযাত্রায় শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সেই ছোঁয়ায় আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে মুড়ি তৈরির ধরণ।

যান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হাতে ভাজা মুড়ি যেন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সহসায় হাতের ভাজা তৈরি মুড়ি তেমন চোখে পড়ছে না। মেশিনের তৈরি মুড়ি সব জায়গা দখল করে নিয়েছে।

এক সময় গ্রামের গৃহবধূরা হাতে তৈরি মুড়ি ভাজতেন। হাতে ভাজা মুড়ির ছিল আলাদা স্বাদ। আর বাংলার সংস্কৃতিতে রমজান মাসে হাতের তৈরি মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন কল্পনা করা যেতো না। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে নানা খাবারের সঙ্গে মুড়ির কদর ছিল বেশ।

গৃহবধূরা চাল সংগ্রহ করে পানিতে ভিজিয়ে লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নানা প্রক্রিয়া করে মুড়ির চাল তৈরি করতেন। এরপর সেই চাল দিয়ে তৈরি করা হতো হাতে ভাজা মুড়ি। বর্তমানে সব জায়গায় কমে গেছে হাতে ভাজা মুড়ি। এ ক্ষেত্রে হাতে ভাজা মুড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে কারখানার মেশিনের তৈরি মুড়ি।

একটা সময় ছিল গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা মৌসুমী ধান কাটার পর মুড়ি ভাজার জন্য আলাদা করে ধান রাখতেন। সেই ধান রোদে শুকানোর পর ভাঙিয়ে চাল তৈরি করে নিজ হাতে মুড়ি ভাজতেন।

অনেকে আবার ভালো চাল কিনে মুড়ি ভাজতেন। প্রতিটি ঘরে ছিল হাতে ভাজা মুড়ি তৈরির উৎসব। গ্রামের ছোট-বড় যে কোনো পরিবারে সারা বছরই হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যেত।  সেই সঙ্গে অনেক পরিবারের লোকজন  হাতে তৈরি মুড়ি ভেজে বিক্রি করে বেশ টাকা উপার্জন করতেন। আর রমজান মাসে ছিল বাড়তি কদর।

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামাঞ্চলে হাতে তৈরি ভাজা মুড়ি যেন তেমন চোখে পড়ছে না। দেশের বড় বড় নামি-দামি কোম্পানিগুলো মুড়ি তৈরি করে অতিসহজে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের দোকানগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে।

গত কয়েক বছর আগেও পৌর শহরের দেবগ্রাম, রাধানগর, উপজেলার মোগড়া, আজমপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হাতে তৈরি ভাজা মুড়ি তৈরি করতেন। সময়ের প্রেক্ষাপটে যান্ত্রিক কারখানায় তৈরি মুড়ি বাজার দখল করে নেয়ায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

মুড়ি ভাজা ছেড়ে দেওয়া রতন দাস বলেন, এক সময় বছরজুড়ে বাড়িতে হাতের ভাজা মুড়ি তৈরি করা হতো। পরিবারের সবাই কমবেশি শ্রম দিতো। স্থানীয়দের পাশাপাশি পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে মুড়ি নিয়ে যেতো। বর্তমানে চাল, লাকড়িসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ তেমন হয় না। তাছাড়া মেশিনের তৈরি মুড়ি অতি সহজে বিভিন্ন দোকানে পাওয়ায় হাতে তৈরি মুড়ির চাহিদা অনেক কমে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আসলে হাতে তৈরি মুড়ির রং লালচে হলেও খেতে সুস্বাদু হয়। এই মুড়ি দীর্ঘ দিন ঘরে রাখলেও এর স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। কারখানায় মুড়ি দেখতে সাদা ধবধবে হলেও ২ দিন ঘরে রাখলেই চুপসে যায়। এসব মুড়ি খোলা অবস্থায় প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি

হওয়ায় সব জায়গাতে চাহিদা বেড়েছে। এতে করে হাতে তৈরি মুড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

অরুণ সাহা বলেন, ৪০ বছর ধরে নিজের হাতে তৈরি করা মুড়ি ভেজে বিক্রি করছি।  এক সময় এ পাড়াসহ অন্য জায়গাতে অনেক লোকজন হাতে মুড়ি তৈরির কাজে জড়িত ছিল। বর্তমানে নানা প্রতিকূলতায় অনেকেই মুড়ি তৈরি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।  অন্য কোনো কাজ জানা না থাকায় এ পেশায় কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় বাজারে হাতে ভাজা প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। এখানে বিক্রি হচ্ছে ১শ টাকায়। রমজান মাস আসায় চাহিদা বেড়েছে।  দৈনিক ৩০ কেজি চালের মুড়ি ভাজা হয়। মুড়ি ভেজে স্থানীয় দোকান ও পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি।

মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি বাড়িতে মা-চাচিরা জমির ধান থেকে মুড়ি ভাজার চাল তৈরি করে মুড়ি ভাজতেন। সব সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরে কমবেশি ভাজা মুড়ি পাওয়া যেতো।  কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মানুষ আর হাতে মুড়ি তৈরি করছে না। মেশিনের তৈরি মুড়ি দোকান থেকে ক্রয় করছেন।  যার কারণে হাতে ভাজা মুড়ির ঐতিহ্য আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে।

ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আসলে সব সময় চেষ্টা করি দেশীয় হাতের তৈরি মুড়ি খাওয়ার জন্য। এখনতো সব জায়গাতে হাতে তৈরি মুড়ি পাওয়া যায় না।  তাই মেশিনের তৈরি মুড়ি কেনা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. লুৎফুর রহমান বলেন, এক সময় ঘরে ঘরে মুড়ি ভেজে খাওয়ার প্রচলন থাকলেও তা এখন নেই। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুড়ি পাওয়া গেলেও হাতে তৈরি ভাজা মুড়ির কদরই অন্য রকম। বর্তমানে হাতে তৈরি মুড়ির চাইতে মেশিনে

ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি। দামও কম। তবে পরামর্শ থাকবে মেশিনে ভাজা মুড়ি না খাওয়া ভালো। কারণ এটা স্বস্থ্যসম্মত নয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com