অর্থনৈতিক ডেস্ক॥
কঠোর অবস্থানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। জনতা ব্যাংকের পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে রূপালী ব্যাংকও। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের পাঁচজন এবং রূপালী ব্যাংকের চারজন ঋণখেলাপীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২৭ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের ঋণখেলাপী মামলায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, বৈদেশিক বাণিজ্য কর্পোরেট শাখা, মতিঝিল, ঢাকার দায়েরকৃত মামলায় গুলশান থানার পুলিশ দীর্ঘদিনের পালাতক ঋণখেলাপী মোঃ আব্দুল্লাহকে গত ২৭ আগস্ট গ্রেফতার করেন। আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মোঃ আব্দুল্লাহ মূলত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একজন তালিকাভুক্ত শেয়ার ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ১৯৯৫-৯৬ সালে এই শাখা থেকে শেয়ারের বিপরীতে নিজ নামে একটি, প্রতিষ্ঠানের নামে তিনটি, স্ত্রীর নামে একটি, দুই ভাইয়ের নামে দুটি এবং তার আগের অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে ১২টিসহ মোট ১৯টি জমাতিরিক্ত ঋণ হিসেবে প্রায় চার কোটি টাকা নেন। এর মধ্যে পনেরোটি ঋণ হিসাবের জামিনদার মোঃ আব্দুল্লাহ এবং তিনিই সকল ঋণের বেনিফিসিয়ারি। ঋণ গুলো আদায়ের জন্য শাখার পক্ষ থেকে বারংবার তাগাদা প্রদান করা হয়। গ্রাহকরা সাড়া না দিলে বাধ্য হয়ে ব্যাংক ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ১৭টি মামলা দায়ের করে। এরপর সকল মামলায় ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি হয়।
ডিক্রি জারি মামলা চলাকালে ব্যাংকের পক্ষে থেকে বারবার তাগাদা ও যোগাযোগে গ্রাহকরা সাড়া না দিলে গ্রাহকের দাবি মতে ১৯টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে প্রাথমিক জামানত হিসাবে তিনি বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট জমা দেন। কিন্তু শাখার শেয়ার ইনভেনটরি (২০০২ সালে প্রণীত) মোতাবেক ১৯টি ঋণ হিসাবের মধ্যে ৩টি হিসাবে প্রাথমিক জামানত হিসাবে কিছু কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট রক্ষিত ছিল। বাকি ঋণ হিসাবগুলোতে কোন জামানত ছিল না। ২০০৬ সালে আদালতের নির্দেশক্রমে শেয়ারগুলো প্রায় এক কোটি টাকা বিক্রি করে চারটি ঋণ সমন্বয় করা হয়। এখনও পনেরোটি ঋণ হিসেবের বিপরীতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যাংক তার কাছে ঋণ বাবদ পাবে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে মোঃ আব্দুল্লাহসহ অন্যান্য ঋণখেলাপিরা ঋণগুলো পরিশোধের লক্ষ্যে সুদ মওকুফের আবেদন করেন এবং ব্যাংক তাদের ঐ সুবিধাও প্রদান করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব ঋণ নিয়ে উত্তরা, বেইলি রোড, গুলশান ও বিভিন্ন স্থানে তার নামে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করেন। ঋণের টাকা আদায়ের জন্য তার নামে ব্যাংক মামলা দায়ের করলে তিনি ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি করে মালয়শিয়াতে পাড়ি জমান। সেখানে সেকে- হোম গড়ে তোলেন। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশেও আসেন। দেশের বাকি ফ্ল্যাট-প্লট ও সম্পত্তি তার স্ত্রীর নামে রয়েছে বলে জানা গেছে।
তার বিরুদ্ধে এখনও ব্যাংকের দায়েরকৃত ১৫টি মামলা সচল আছে। ২০১১ সাল থেকে ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়ে ৮-১০টি মামলায় বিভিন্ন অর্থঋণ আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঋণখেলাপীদের বিভিন্ন ঠিকানায় জারি করা হয়। তবে ধূর্ত ঋণখেলাপিরা পালিয়ে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে মোঃ আব্দুল্লাহ দেশে আসায় বিগত গত মাসের শুরুতে অর্থজারি মাকদ্দমা নং-৩৯৫/২০০৪-এ অর্থঋণ আদালত-৪ কর্তৃক ইস্যুকৃত তৃতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জারিকৃত পরোয়ানা অনুসারে অন্য ঋণখেলাপীদেরও গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। তার ব্যবসায়িক ঠিকানাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জ্যোতি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (৪র্থ তলা) ও আরাফাত সিকিউরিটিজ (৬ষ্ঠ তলা), এ, কে, ম্যানসন, ৫৯/৩/৩, পুরানা পল্টন, ঢাকা। বর্তমান আবাসিক ঠিকানা : মোঃ আব্দুল্লাহ, পিতা-মৃত আলহাজ সেকান্দার মিয়া, মর্নিং গ্লোরি, রোড নং-১২৭, বাড়ি নং-১২, রুম নং-এ/৩, গুলশান-১, ঢাকা এবং স্থায়ী ঠিকানা : মোঃ আব্দুল্লাহ, পিতা-মৃত- আল হাজ সেকান্দর মিয়া, গ্রাম- শ্রীরামপুর, পোঃ রায় শ্রীরামপুর, থানা- রামগঞ্জ, জেলা-লক্ষ্মীপুর। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, খেলাপী ঋণ আদায়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন যে কোন মূল্যে ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে।