নিউজ ডেস্ক॥
দীর্ঘদিন ধরেই চড়া রয়েছে চালের বাজার। সরবরাহ বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্কছাড় দিলেও সুফল মিলছে না। বেসরকারি আমদানি না বাড়ায় শুল্কছাড়ের প্রভাব পড়েনি বাজারে। যদিও সম্প্রতি মোটা ও মাঝারি চালের দাম ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে চিকন চালের দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের বাজার চড়া রাখা হয়েছে। আমদানি না বাড়লে শিগগিরই দাম কমবে না।
গত ২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়। চাল আমদানির মোট করছাড় ২৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এরপর থেকে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি কিছুটা বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম।
অপরদিকে ভারত সরকার চাল রপ্তানিতে নতুন করে শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। একদিকে ডলারের বাজারে অস্থিরতা এবং ভারত থেকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক আমদানিকারক চাল আমদানির ঝুঁকি নিচ্ছেন না।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত বোরো মৌসুমে সরকার সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। বিপরীতে সংগ্রহ করে ২ লাখ ৬২ লাখ টন। তবে ১১ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। অপরদিকে চালের সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় সরকার গত ২০ জুলাই ৩৮০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অথচ গত ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মাত্র ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এতে আমদানি সুবিধার পরেও বাজারে আমদানিকৃত চালের সরবরাহ সেভাবে বাড়ছে না।
এদিকে দেশে উৎপাদিত চালের সরবরাহে বাজারে কৃত্রিম সংকট ধরে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর একাধিক পাইকারি বিক্রেতা।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স রনি রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. মনিরুল ইসলাম জনি বলেন, নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়। দীর্ঘসময় ধরেই বাজারে চালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে বড় মিলগুলো। তারাই প্রথমে দাম বাড়িয়ে দেয়। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও বাড়িয়ে দেয়। এদের সঙ্গে রয়েছে কিছু আড়তদারও। কৃত্রিম সংকট তৈরিতে তারাও সহযোগিতা করে থাকে। তিনি আরও বলেন, কারওয়ান বাজারের বেশির ভাগ চাল মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট থেকে আসে। সেখানে সকালে এক দাম থাকে, বিকালে আরেক দাম। এমনও হয় যে, ফোনে বুকিং দিয়ে আড়তে গেলে বলা হয় চাল নেই। মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালে এরা আড়ত রেখে পালিয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলে আবারও চলে আগের মতো। এভাবেই চলছে।
কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট এলাকার চাল ব্যবসায়ী মো. মিলন হোসেনও বলেন, অনেকটা সময় ধরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর সম্প্রতি চালের দাম বিশেষ করে মোটা ও মাঝারি চালের দাম সামান্য কমেছে। আগের চেয়ে এখন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে চালের বস্তা (৫০ কেজি) কিনতে পারছি। তবে এটাকে দাম কমা বলে না। যে কোনো সময়েই বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বাড়ে-কমে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি চালের জোগান আগের মতোই অনেক কম। দেশি চালের বস্তা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আড়তে গেলে কাক্সিক্ষত চাল পাওয়া যায় না। বাজারে সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যায়। খুচরা ও ছোট পাইকারদের তেমন ব্যবসা হয় না। কিন্তু দফায় দফায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেট চক্র ও বড় ব্যবসায়ীরা ঠিকই অতিরিক্ত মুনাফা করে নেয়।
রাজধানীর খুচরাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল স্বর্ণার কেজি ৫৫ টাকা থেকে কমে ৫৩ টাকা হয়েছে। অপরদিকে মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ৫৮ থেকে কমে ৫৬ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের কেজি এখন ৫৭ থেকে ৫৮ টাকার আশপাশে। অপরদিকে মিনিকেটের কেজিতে কোথাও কোথাও ১ টাকা কমেছে। তা ছাড়া নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেশিরভাগ দোকানেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীও দাবি করেন, চালের দাম বর্তমানে কমতির দিকে। আমদানি বাড়লে দাম আরও কমে যাবে। কিন্তু এতে মিল মালিকদের লোকসান হবে। কারণ মিলগুলোয় বর্তমানে খরচ বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, চলতি বছর বোরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলে বন্যার কারণে বিপুল ফসলের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া অতিবৃষ্টিও ছিল। এর ফলে চাল উৎপাদন কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া মিলগুলোতেও ধান থেকে চাল তৈরিতে খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। সব মিলিয়ে দেশি চালের দাম এখন বাড়তি। অন্যদিকে ডলারে অস্থিরতায় চালের আমদানিও কম। আমদানি এবং বাজারে আমদানি করা চালের সরবরাহ বাড়লে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে।
(সোর্স: আমাদের সময়)