এফবিডি ডেস্ক॥
কৃষি এ মৎস্য পণ্য রপ্তানিতে ধীরগতি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিল। তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি ও মৎস্য ব্যাপকভাবে কমেছে। অর্থাৎ কৃষি ও মস্য রপ্তানিতে ধ্বস নেমেছে।
কৃষি ও মৎস্য রপ্তানির বিপরীতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিযে থাকে সরকার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষি ও মস্য রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৬৩৭ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য দেখা যায় গত অর্থ বছরের একই সময়ে কৃষি ও মস্য রপ্তানি ছিল ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার।
খাত সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন আগামী কয়েক মাস এ ধারা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি আয়ে ২.০৮ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা স্বপ্নই থেকে যেতে পারে।
তারা আরো বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, পণ্য পরিবহনে চার্জের পাশাপাশি উপযুক্ত খামারের পণ্যের ঘাটতি হতাশাজনক অবস্থার মূল কারণ।
বাংলাদেশ ৬০টিরও বেশি দেশে চিংড়ি এবং অন্যান্য হিমায়িত মাছ, জীবন্ত মাছ, কাঁকড়া, ফল, সবজি, তামাক, চা ও মশলা এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য রপ্তানি করে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর বলছেন বাংলাদেশ থেকে মুলত ইইউ, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারত বাংলাদেশী তাজা এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সাধারণত গ্রীষ্মকালে কৃষি পণ্যের রপ্তানি কম থাকে কিন্তু শীতকালে বেড়ে যায়। চলতি অর্থ বছর গ্রীষ্মে রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। পণ্য পরিবহনে বেশি চার্জ এবং জুন-আগস্ট সময়ের বন্যার কারণে সবজির অভাবে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন বর্তমান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি। এতে রপ্তানি কারকরা লাভ করতে পারছে না। বর্তমানে অনেক রপ্তানি কারক রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে স্থানিয় বাজারে সবজির দাম কমতে থাকায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সামগ্রিক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে তিনি মনে করছেন।
কৃষি ও মস্য রপ্তানিকারক শরিফুল আলম বলেছেন, যে বিমানে রপ্তানি পণ্য বহনে চার্জ প্রতি কেজিতে ২.৫ ডলার গুণতে হচ্ছে। যা প্রতিযোগী ভারত এবং থাইল্যান্ডের জন্য প্রতি কেজি ২.০ ডলারের এর নিচে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে উচ্চ মূল্য এবং মালবাহী পণ্যে বেশি চার্জ মাঝারি মানের ব্যবসায়ীদের রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত করছে।
অপর রপ্তানি কারক মোঃ ইকতাদুল হক বলেন, মন্দার মধ্যে ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে চাহিদা কম। কাঁচামালের দাম বেড়েছে কিন্তু ক্রেতারা দাম বাড়াতে রাজি নন এবং জ্বালানি সংকটের মধ্যে উৎপাদনও কমে গেছে।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক হক বলেন, “আমাদের কোম্পানি মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইইউ দেশগুলিতে চাল, আলু এবং আরও কিছু পণ্য রপ্তানি করে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে চালের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের মূল্য বৃদ্ধিতে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তবে ভালো ডিসেম্বর এর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আলু ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ছে।
ইপিবি তথ্যানুসারে দেশের রপ্তানিকারকরা চলতি অর্থ বছরের জুলাই-নভেম্বর কৃষি পণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে ৪২৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫৭ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসে পির ক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে ২৮২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। যা গত অর্থ বছরের একই সময় ছিল ৪৪৮ মিলিয়ন ডলার।
ইকতাদুল হক বলেন আমরা ১৪৫টি দেশে ১০০ টিরও বেশি পণ্য রপ্তানি করি। মন্দার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় কয়েকটি গন্তব্যে অনেক পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। তিনি স্বীকার করেন যে বেশিরভাগ শিল্প চাহিদা হ্রাসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারনে উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি আমিন উল্লাহ বলেন, চিংড়ি এবং অন্যান্য হিমায়িত মাছ রপ্তানির পতনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ইউরোপে চাহিদা হ্রাসের পেয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় চিংড়ির উচ্চ উৎপাদন খরচ এবং উৎপাদন কমে যাওয়াও পতনের অন্যতম কারণ।