স্টাফ রিপোর্টার॥
আসন্ন পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ গবাদিপশু কোরবানীর জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছে। এসব পশু নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেওয়া হবে। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে এসব পশু বিক্রির জন্য নিজ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট বাজারে নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে ঘাটে অনিরাপত্তা ও হয়রানির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানাযায়, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশুর সংখ্যা ৬ লাখ, ৫৫ হাজার ৯০৪টি। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভী রয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০,ছাগল প্রায় ৪ লাখ, মহিষ ৩ হাজার ৮৭৫ ও ভেড়া ৬৭ হাজার ৩০৩টি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি হাটে আসা গরুর ব্যাপারী আব্দুর রহিম, খালেক, ছালামসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সড়ক পথের চেয়ে নদীপথে কোরবানীর গরু পরিবহনে ব্যবসায়ীরা বেশী নিরাপদ মনে করে। কারণ, সড়ক পথের চেয়ে নদীপথে পরিবহণ ব্যয় অনেক কম ও অধিক নিরাপদ। তবে এবার নৌপথে ডাকাতি, ছিনতাই ও ঘাটে ঘাটে চাঁদা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। উল্লাপাড়া বোয়ালিয়া ও রায়গঞ্জ চান্দাইরকোনা পশুর হাটে আসা গরুর ব্যাপারী সোলেমান, আজগর, আলমগীর, সাইদুলসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এসব পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাক, মিনি ট্রাক, ইঞ্জিল চালিত নছিমন, করিমন, ভুটভুটিতে সড়ক মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের হাট বাজারে নিতে গেলে পথে পথে নানা হয়রানি ও চাঁদা দিতে হয়। সেই সাথে ডাকাতি ও ছিনতায়ের আশংকা তো রয়েছেই। শাহজাদপুরের জামিরতা বাজারের গরু ব্যবসায়ী মুন্সী আবুল কালাম আজাদ বলেন, যমুনা নদী পথ দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন পশুর হাটে বেপারীরা গরু ছাগল নিয়ে যায়। এ নৌপথে বিভিন্ন স্থানে কোরবানীর আগে অস্থায়ী গরু ছাগলের হাট বসায় তাদেরকে এসকল পশুর হাটে জোর করে থামিয়ে নৌকা থেকে গরু ছাগল নামিয়ে বিক্রির জন্য বাধ্য করা হয়। এ কারণে তাদের অধিকাংশ সময় লোকসান গুনতে হয়। এ সব ব্যবসায়ীরা সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে পশু পরিবহনে হয়রানি বন্ধসহ ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: একে এম, আনোয়ারুল হক সবুজ বলেন, জেলায় এবার কোরবানির যোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ৬লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি। এর প্রায় অর্ধেকই চরাঞ্চলে পালিত হয়েছে। চাহিদা রয়েছে ২লাখ ৫৯হাজার ২৪১টি। অবশিষ্ট ৩লাখ ৯৬হাজার ৬৬৩ টি পশু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, যমুনার চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস উৎপাদন হওয়ায় জেলার চরাঞ্চলে কোরবানী উপলক্ষে গবাদিপশু পালনে খামারীরা ঝুঁকে পড়ে। প্রাকৃতিক উপায়ে চরাঞ্চলে গরু ছাগল পালন করায় সারা দেশে এ অঞ্চলের গরু ছাগলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
টাঙ্গাইল অঞ্চলের নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মো, সোহেল রানা জানান, পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে নৌ পথে যাত্রী, পণ্য ও কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে নদীতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যাতে তারা নদী পথে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। সেই সাথে হাট -ঘাটের ইজারাদার, গবাদিপশু ও পণ্য ব্যবসায়ীসহ নদী পথে চলাচলরত সাধারণ মানুষের মাঝে এ সময় বিভিন্নভাবে সচেতন করা হচ্ছে।
বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো শহিদ উল্লাহ অবৈধ যানে পশু পরিবহন না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ঈদ উল আজহা উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সেই সাথে কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে ক্রেতা -বিক্রেতা উভয়কেই সচেতনতা অবলম্বন করে চলতে হবে। নগদ টাকা না নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে সবাইকে লেনদেন করার অনুরোধ জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কগুলোতে যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজী করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো, ফারুক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রীক ক্রেতা-বিক্রেতা ও পশু পরিবহনে ডাকাতি, ছিনতাই ও হয়রানি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক ) গণপতি রায় জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে ইজারাকৃত পশুর হাট ব্যতিত কোনো ধরনের অস্থায়ী পশুর হাট বসালেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রীক কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি থাকবে।