রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদ এখন প্রাণহীন সরু খাল

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ৮.৪৭ পিএম


হোসনেয়ারা পারভীন খুকু, খুলনা থেকেঃ



খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদী এখন প্রাণহীন সরু খালে পরিণত হয়েছে। ২০-২৫ বছর আগেও নদীটি ছিল এ অঞ্চলের প্রধান যাতায়াত ও নদী পথে বাণিজ্যের মাধ্যম। খনন না করায় পলি জমে নাব্যতা সংকটের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় নদীটি এখন বালুচরে রূপ নিয়েছে। দখল হচ্ছে নদীটির দুই পাড়। গড়ে উঠছে জনবসতি, শিক্ষা, ধর্মীয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এতে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষকেরা। নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে না পারায় ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে চাষীদের।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, কপোতাক্ষ নদটি যশোর, সাতক্ষীরা হয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার বুক চীরে শিবসা নদীতে গিয়ে মিশে গেছে। খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদ কয়রা উপজেলার আমাদী এলাকা থেকে প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার অংশ প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২০-২৫ বছর আগেই। এক সময়ের ১৫০ মিটার প্রশস্ত নদটি এখন ৩-৪ মিটার প্রাণহীন সরু খালে পরিণত হয়েছে। ভাটার সময়ে সেখানে নৌকা চালানো যায় না। হেঁটেই পার হয় মানুষ। একটা সময়ের বড় নদী এখন তার চরিত্র বদলে গেছে। নদীর প্রাণ হচ্ছে বিলের পানি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কালভার্ট, সেতুর মুখ বন্ধের কারণে নদীর পানি সঠিক প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন নতুন চর জেগে উঠেছে। যা একের পর এক দখল করে নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা। তৈরি করা হয়েছে পাকা ও কাঁচা-পাকা একাধিক বসতবাড়ি ও দোকানপাট। আবার নদের জেগে ওঠা চর ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখল করে মাছের ঘের করেছে। এছাড়াও নদের চর ভরাটের জায়গায় জনবসতি ও সরকারিভাবে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করায় দখলবাজদের অধীনে চলে যাচ্ছে সমস্ত এলাকা। জোয়ারের সময় কপোতাক্ষ নদে কোনো পানিই ওঠে না।
কপোতাক্ষ নদী সম্পর্কে কপোতাক্ষ পাড়ের মসজিদকুড় গ্রামের বাসিন্দা আজিবর সানা জানান, ২০ বছর আগেও এই দুটি নদী ঘিরে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা চলত। বণিকরা কপোতাক্ষ নদ দিয়ে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় বাণিজ্য করতে আসতেন। বড় বড় মালবাহী জাহাজ চলত, জোয়ারভাটা, মাছ শিকার ও নৌযান চলাচল ছিল নিয়মিত চিত্র। ধীরে ধীরে কপোতাক্ষ নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। পরে নদী খনন করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ফের ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানিতে তলিয়ে যায় কৃষি জমি, বসতবাড়ি।
কয়রার আমাদী এলাকার কপোতাক্ষের পাশেই রফিকুল ইসলামের বাড়ি। পুরোনো দিনের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, একসময় তাঁর বাড়ীর পাশেই ছিল লঞ্চঘাট। ১৫-২০ বছর আগেও এই নদে স্রোত ছিল, ছিল জোয়ার-ভাটা। কিন্তু বর্তমানে কপোতাক্ষের দিকে তাকালে এখন সে কথা বিশ্বাস করাই কঠিন।
স্থানীয় বাসিন্দা রুদ্র রাজন জানান, কপোতাক্ষ নদী আগাগোড়া ভরাট হয়ে গেছে। নদী দখল করে গড়ে উঠেছে জনবসতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। দ্রুত নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে কপোতাক্ষ নদী যেটুকু আছে, সেটুকু বিলীন হয়ে যাবে। পুরোটাই দখল করে নেবে ভূমি দস্যুরা। কপোতাক্ষ নদের প্রবাহ স্বাভাবিক না রাখতে পারলে কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকায় আরও বিপর্যয় নেমে আসবে জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কিছু অংশে নদী খনন করা হয়েছে। খুলনার পাইকগাছার বোয়ালিয়া থেকে কয়রা উপজেলার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদ পুনঃখননের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান, কিছু নদীতে দুদিক থেকে পানির সঙ্গে পলি এসে দ্রুত ভরাট করে দিচ্ছে। এছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভারত থেকে পানি কম আসে। ফলে পদ্মা, মেঘনা ও মধুমতী নদীর সঙ্গে এসব নদীর সংযোগও অনেক কমে গেছে। সে কারণে পানির প্রবাহ কম থাকায় পলি জমে যাচ্ছে। ভরাট হচ্ছে নদী। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী নিয়ে স্টাডি করতে হবে। তারপর সেই আলোকে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই সুফল মিলবে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, কপোতাক্ষ নদটি খনন হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। সেই সাথে নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com