তীব্র জ্বালানি সংকটে ভুগছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ( ইইউ) এবং পশ্চিমা দেশগুলো। আকাশচুম্বী বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল মেটাতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষ। উৎপাদন ও সরবারহ খরচ অত্যাধিক বাড়ায় বিপর্যয়ের মুখোমুখি কারখানা গুলো। তীব্র সুদের হার মিটিয়ে উৎপাদন চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে শিল্পকে টিকেয়ে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট। ব্যবসায়িক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শিল্প কারখানা গুলোর ৮৪০ কোটি ইউরো জ্বালানি বিল পরিশোধ করবে ফ্রান্স। এদিকে মার্কিন বৈদ্যুতিক গ্রিডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রণোদনা দেবে ফ্রান্স। গত শনিবার দেশটির ইন্টার রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মাইরে বলেন, “ফ্রান্স ইইউ নিয়মের অধীনে অনুমোদিত ন্যূনতম বিদ্যুৎ ব্যবহারে কর কমিয়ে দেবে। কোম্পানিগুলোকে সস্তা পারমাণবিক শক্তি পাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের চাপ কমানো হবে। ৮৪০ কোটি ইউরো অনুদান দেওয়া হবে। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও এতে উপকৃত হবে।”
চলতি বছরের শুরুতে উচ্চ জ্বালানি বিলের প্রভাব থেকে কোম্পানি এবং পরিবারগুলোকে রক্ষা করার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল জার্মানি। একই সুবিধা ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোও পেতে পারে উল্লেখ করে ব্রুনো লে মাইরে আরও বলেন, ” জার্মানির পাশাপাশি ফরাসি কোম্পানিগুলোকেও সুরক্ষিত করা হবে। আমরা নিশ্চিত করব ইইউ প্রতিযোগিতার নিয়মগুলো সমস্ত কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ বা জার্মান হোক যেই হোক না কেন সবাই এই সুবিধা পাবে।”
এদিকে রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে মার্কিন বৈদ্যুতিক গ্রিডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে অনুদান ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিদলীয় অবকাঠামো বিলের অধীনে নতুন অর্থায়নে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়া হবে। দেশটির জ্বালানি বিভাগ বলছে, গত বছর পাস হওয়া অবকাঠামো আইন, চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি প্রতিহত করতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বিল সাহায্য বিল পাস হয়েছে। এবার সে অনুদান থেকে পাওয়ার সিস্টেমকে শক্তশালী করতে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং নতুন ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণে ২৫০ কোটি ডলার প্রদান করা হবে।
২০১০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান ভূখণ্ড থেকেই বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আহরণ করেছিল। এটিকে মার্কিন ‘শেল বিপ্লব’ বলা হয়ে থাকে। এটি এই ভবিষ্যদ্বাণীর দিকে সবাইকে পরিচালিত করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে তেলের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে না। রিচার্ড নিক্সনের ‘প্রজেক্ট ইনডিপেন্ডেন্স’ শীর্ষক স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রকল্প গ্রহণের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে জ্বালানি নিরাপত্তাকে দেখেছিল। এক দশকের নিষ্ফল মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর মার্কিন প্রেসিডেন্টরা পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিদেশি জ্বালানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন। তেলের উচ্চ মূল্য সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য, বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো; কিন্তু ভোক্তাদের জন্য ভালো নয়। এটি মুদ্রাস্ফীতির জন্য এবং প্রধান তেল উৎপাদনকারী নয় এমন অঙ্গরাজ্যগুলোর জন্য খুবই খারাপ।
এদিকে নতুন ব্যয় নিয়ে হোয়াইট হাউস বলছে, দেশের আনুমানিক ৭০ শতাংশ ট্রান্সমিশন লাইন ২৫ বছরের বেশি সময়ের পুরানো। এসব দুর্বল এবং সমালোচনামূলক অবকাঠামো মার্কিনীদের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল করে তোলে। ২০৩০ সালে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন বিদ্যুত অর্জনের জন্য আপগ্রেড ট্রান্সমিশন সিস্টেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।