শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

গ্যাস, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গ্রীষ্মে ঘুরে দাড়াতে চায় পোশাক খাত

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮.৫৫ এএম
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

তৈরি পোশাক উৎপাদনের প্রধান একটি উপাদান– তুলা আমদানির ওপর বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্যাপক নির্ভরশীলতা রয়েছে। তুলা থেকে সুতা তৈরি, কাপড় প্রস্তুত ও ডায়িংয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন চালিয়ে যেতে কারখানায় স্থাপিত ছোট আকারের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন পোশাক প্রস্তুতকারকেরা।

শিল্পাঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতির ফলে- আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ, গত কয়েক মাসের ধীরগতির প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার আশা করছে পোশাক শিল্প।

এ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এরমধ্যেই শীর্ষ বিদেশি বায়াররা অর্ডার দেওয়ার জন্য খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। আর পোশাক প্রস্তুতকারকরাও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির ফলে নতুন অর্ডার পূরণের মাধ্যমে গত কয়েক মাসের মন্থর দশার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারা যাবে বলে মনে করছেন।

শীর্ষ একজন পোশাক প্রস্তুতকারক বলেন, “বর্তমান ধারায় বিক্রিবাট্টা চললে এবং আমরা যদি কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাই– তাহলে আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ পোশাক খাত আবার সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরবে।”

এ প্রসঙ্গে প্রায় এক ডজন পোশাক রপ্তানিকারকের সাথে আলাপ করেছে। তাদের অধিকাংশই বলেছেন, এ বছরের জুলাই বা আগস্টের চেয়ে কারখানা পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে।

গাজীপুরের মাওনা এবং ময়মনসিংহের ভালুকা শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানান ইশরাক স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক।

 

বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিকেএমইএ)’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকাতেও এখন আগের চেয়ে সরবরাহ ভালো অবস্থায় আছে।

তবে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ জানান– মানিকগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং গাজীপুরের তৈরি পোশাক শিল্প হাবের কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলার দাবি, বিদ্যুৎ রেশনিং এবং অফিসের সময়সূচি পুনঃনির্ধারণসহ সরকারের কিছু সাশ্রয়ী উদ্যোগের ফলে শিল্পে গ্যাস সংকটের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়েছে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমার ঘটনায়, চাপ কমেছে গ্যাস ব্যবহারের ওপর। আর সেকারণে শিল্পাঞ্চলের গ্রাহকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জোগান দিতে পারছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বলেন, “সাপ্লাই লাইনের একদম শেষদিকে থাকা কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রাহক হয়তো গ্যাসের চাপ কম পাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে পুরো একটি শিল্পাঞ্চলে গ্যাস নিয়ে কোনো সমস্যা থাকার কথা না।”

তিনি জানান, জ্বালানি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও সরবরাহের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস সরবরাহ করছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২,৬০০ এমএমসিএফ।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে থাকবে বলেও জানান নাজমুল আহসান। “শীত শেষে মার্চ থেকে আমাদের গ্যাস চাহিদা আবার বাড়তে থাকবে। এরমধ্যেই আমরা অতিরিক্ত এলএনজি (তরলীককৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির কথাও ভাবছি”।

তৈরি পোশাক উৎপাদনের প্রধান একটি উপাদান– তুলা আমদানির ওপর বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্যাপক নির্ভরশীলতা রয়েছে। তুলা থেকে সুতা তৈরি, কাপড় প্রস্তুত ও ডায়িংয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন চালিয়ে যেতে কারখানায় স্থাপিত ছোট আকারের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন পোশাক প্রস্তুতকারকেরা।

আশা বড়, কিন্তু মন্দার ধাক্কা থেকে কতখানি সুরক্ষিত?

পোশাক ও বস্ত্রবয়ন (টেক্সটাইল) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প। মহামারি শেষে উন্নত বিশ্বের ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধির সুফল লাভ করে এ দুই শিল্প।

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে, গত জুলাই থেকে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাকপণ্য রপ্তানিকারক বাংলাদেশে আসা অর্ডারের গতি কমে আসে। উদ্যোক্তারা জানান, মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাসহ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

অন্যদিকে, দেশের পোশাক কারখানাগুলো ঘন ঘন লোডশেডিং, গ্যাসের চাপ কম থাকা এবং দ্রুত হ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রক্ষায় সরকারের আমদানি কমানোর উদ্যোগের ফলে কাঁচামাল ঘাটতির শিকার হয়।

পোশাক শিল্প বাংলাদেশের শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ ৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাকপণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশ ছিল।

সবমিলিয়ে দেশের ও বিশ্ব পরিস্থিতি শঙ্কার কালো ছায়া ফেলেছিল পোশাক শিল্পে। রপ্তানি তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির শিকার হয় পোশাক রপ্তানি। তবে অক্টোবরে এটি ইতিবাচক ধারায় ফেরে, এবং নভেম্বরে বড় উল্লম্ফন হয়।

স্থানীয় পোশাক শিল্প শার্ট, টি-শার্ট, ডেনিম প্যান্ট, মহিলাদের পোশাক এবং বাচ্চাদের আইটেমের মতো মৌলিক পোশাক তৈরি করে। উদ্যোক্তাদের মতে, স্বল্পমূল্যের পণ্যগুলো বৈশ্বিক মন্দার যে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে তার কবল থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত।

তেমনটাই বলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি-ও। তিনি বলেন, কঠিন অর্থনৈতিক দশার মধ্যেও মানুষকে সাধারণ পোশাকআশাক তো পরতেই হয়।

তবে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানির কিছু পিক টাইম বা সর্বোচ্চ সময় রয়েছে। মূলত গ্রীষ্ম ও শীতকালের চাহিদাকে মাথায় রেখে এটি বাড়ে। গ্রীষ্মের আগেই ওই ঋতুর পোশাক চালান তৈরিতে প্রতিবছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন বাংলাদেশের প্রস্তুতকারকেরা।

স্থানীয় প্রস্তুতকারকেরা বলছেন, আগামী বছর বিশ্বমন্দা দেখা দিলেও একেবারে সাধারণ পোশাক পণ্যের চাহিদা খুব একটা কমবে না। এছাড়া, ওয়াশিংটন-বেইজিং এর সম্পর্কে অবনতি এবং কোভিড বিধিনিষেধের জের ধরে চীন থেকে অনেক অর্ডার বাংলাদেশে চলে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

দৃঢ়তার সাথে ব্যবসায়িক অঙ্গীকার রক্ষার সুফল মিলছে এখন

কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও, স্থানীয় প্রস্তুতকারকেরা এমনকী মুনাফার মার্জিনের সাথে আপস করে সময়মতো পোশাকের চালান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অনড় ছিলেন।

এসময় সময়মতো অর্ডার পূরণে বিদ্যুৎ সংকটের সময়ে তারা উৎপাদন সচল রাখতে ব্যবহার করেছেন ডিজেল চালিত জেনারেটর। অন্য উদ্যোক্তারা আরও বেশি খরচের বিকল্প উপায়ও গ্রহণ করেন। কেউ কেউ গার্মেন্টসের ঝুট বা ধানের তুষ পুড়িয়ে সচল রাখেন কারখানার বয়লার।

গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতির সময়ে, স্পিনিং ও বুনন পর্যায়ে স্থানীয় পোশাক কারখানাগুলোর ফ্যাশন উপকরণ অপচয়ের পরিমাণও বাড়ে। এসময় যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল–তাতে দিনে মাত্র ১২ ঘণ্টা চালানো যেত উৎপাদন। তবে হার মানেননি উদ্যোক্তারা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে এমন মন্তব্য করেন এনভয় টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আমাদের ওপর বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দৃঢ় বাণিজ্যিক আস্থা আগামী মাসগুলোয় সুফল বয়ে আনবে।

ফতুল্লাহ এপারেলস- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান   বলেন, “জানুয়ারি থেকেই আমরা সন্তোষজনক হারে অর্ডার পাওয়ার আশা করছি। তার আগেই আমাদের এনার্জি নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

এপ্রিলের পর কী হবে?

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে বর্তমানে ওমান ও কাতার থেকে প্রতিমাসে ছয়টি এলএনজি চালান আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্রীষ্মকালীন পিক চাহিদা পূরণে এই আমদানি চুক্তি আগামী বছরের মার্চে আরও ৮ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি এবং স্থানীয় উৎপাদন মিলিয়ে মার্চে গ্যাস সরবরাহ ২,৯০০ এমএমসিএফ হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি সূত্র।

দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি ছাড়াও, সৌদি আরব ও ব্রুনাই থেকে আমদানি করেও জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে সরকার।

 

সম্প্রতি এলএনজি আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে ব্রুনাই সফর করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল। গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে সৌদি আরবও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বিকল্প উৎস।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com