সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার গাড়ি পারাপার: টোল আদায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত, আহত তিন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত দুই ফুট বাঁধই ভরসা, আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটে খুলনা উপকূলবাসীর খুলনা অঞ্চলের ভরত ভায়না দেউল হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খুলনায় সড়ক বিভাগের বাধায় বন্ধ কেসিসির ৭ মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সাবেক এমপি আজিজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.৫১ পিএম
ছবি: সংগ্রহীত

টিডিএস ডেস্ক॥

জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাইয়ে এর পতন শুরু হয়ে সেই ধারা আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দেশে সংঘটিত সহিংসতা, মৃত্যু ও ইন্টারনেট বন্ধকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে তাদের একাংশ, যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে। অনেকেই আনঅফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছেন।
২৪ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। তবে এ হিসাব কিছুটা বাড়তেও পারে। কারণ টানা পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। চলতি আগস্টের শুরুতে দেশে রেমিট্যান্স আসা থমকে যায়। তবে সরকার পতনের পর থেকে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অনেক পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীরা সাধারণত দেশে অর্থ পাঠাতে ব্যাংক এবং অফিসিয়াল চ্যানেলগুলো ব্যবহার করেন। এর বাইরে অনানুষ্ঠানিক রেমিট্যান্স চ্যানেল, যেটা হুন্ডি নামে পরিচিত সেটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে কাজ করে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের প্রধান গবেষক ড. মনজুর হোসেন বলেন, মানুষকে দ্রুত এবং নিরাপদে টাকা পাঠাতে হবে এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো এখন নির্ভরযোগ্য নয়।
হুন্ডি একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা চতুর্থ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।
ভারত বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের বৃহত্তম প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম। ২০২৩ সালে ভারত ১০০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে ৷ ভারতের মতো, পাকিস্তানেও প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসে।
এই পদ্ধতিটি প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে কাজ করে এবং হুন্ডিদের মধ্যে আস্থা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি এখানে ব্যবহার করা হয় না। লেনদেনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয় না, জড়িত পক্ষগুলোকে বেনামে অর্থ প্রদান করে। হুন্ডি লেনদেন সাধারণত প্রচলিত ব্যাংক ট্রান্সফারের চেয়ে দ্রুত এবং সস্তা হয়। ফি খুব কম হয় এবং বিনিময় হার ভালো থাকে। এটি বিশেষ করে এমন অঞ্চলে দরকার যেখানে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যয়বহুল বা এর সুবিধা পাওয়া কঠিন।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অস্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের কারণে রেমিটেন্স স্থানান্তরের জন্য অনানুষ্ঠানিক রুটের ব্যবহার বেড়েছে। একজন স্থানীয় ব্যাংকার উল্লেখ করেছেন, অনেক প্রবাসী এই পদ্ধতিগুলো পছন্দ করে কারণ তারা কম সময়ে কম খরচে টাকা পাঠাতে পারে।

কী ক্ষতি হচ্ছে?
অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো লাভজনক হলেও এর স্থানান্তরে ঝুঁকি থাকে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রেমিট্যান্স। এতে বোঝা যায় অর্থনীতির জন্য রেমিট্যান্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিগুলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অবদান রাখে না, যা আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। এভাবে চলতে থাকলে তা ডলার ঘাটতি ঘটাবে ফলে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সক্ষমতা হ্রাস পাবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, রেমিট্যান্স পুষ্টি, আবাসন এবং দারিদ্র্য হ্রাসের মতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকগুলোর উন্নতিতে সাহায্য করেছে।

সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩ আগস্ট পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৪ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে প্রথম সপ্তাহের চেয়ে ৪ গুণ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আলোচ্য সময়ে প্রবাসীরা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
রেমিট্যান্স পাঠানো কখনো কখনো ব্যয়বহুল হতে পারে। ব্লকচেইন এবং মোবাইল মানির মতো উদ্ভাবন এই খরচ কমাতে এবং রেমিট্যান্সকে আরো সাশ্রয়ী করতে সাহায্য করতে পারে।
সরকার এসব সমস্যা সমাধানে বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। বিক্ষোভের কারণে রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংককে রেমিট্যান্সে আকৃষ্ট করার জন্য ডলারের উচ্চ বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে। ২৯ জুলাই এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স কেনার জন্য তাদের হার ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সরকারি চ্যানেলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রণোদনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। প্রাথমিকভাবে এই প্ল্যানটি বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান করে। এই প্রণোদনার লক্ষ্য হলো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের তুলনায় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা।
সরকার অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সমানভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাগজপত্র কমানো এবং প্রবাসীদের বাড়িতে টাকা পাঠানো সহজ করা। এই ব্যবস্থাগুলো অফিসিয়াল চ্যানেলগুলোকে আরো ব্যবহারকারীবান্ধব এবং দক্ষ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উপরন্তু, সরকার আন অফিসিয়াল রেমিট্যান্স চ্যানেল ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা শুরু করেছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com