আশরাফুল ইসলাম জয় এবং সিরাজুল ইসলাম শিশির॥
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে তারপর ঘরে ফিরতে হবে। তবেই দেশের মানুষের আশা-প্রত্যাশা পূরণ হবে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঐতিহাসিক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালী তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছি, কিন্তু এর বাইরেও অনেক কাজ করতে হবে। দেশে রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির পথও বের করতে হবে। যদি আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে পারি, তাহলেই আমরা অর্থনৈতিকসহ সব নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পাবো।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি। এতে অল্প লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। সামনে আরও অনেক পথ বাকি আছে। সেই পথ পাড়ি দিতে পারলে মানুষের ভোটের অধিকারও নিশ্চিত হবে।
তিনি বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুরের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যদি এই এলাকার দিকে তাকাই, তাহলে আমরা সম্ভাবনাময় একটি এলাকা দেখতে পাই। সিরাজগঞ্জের নাম আসলেই সামনে ভেসে ওঠে তাঁত শিল্পের কথা। এই পেশার সাথে অসংখ্য মানুষ যুক্ত। এর আগেও কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কৃষি ঋণ মওকুফসহ অনেক কিছু করেছিল। আমার ইচ্ছা, বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে এই তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। সারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বাংলাদেশীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের মাধ্যমে এই শিল্পকে কীভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা আমরা করব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চৌহালীর চিনাবাদামকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, কেন এই কৃষকদের পাশে সরকার দাঁড়াবে না? কেন এই চীনাবাদাম ছড়িয়ে দেওয়া হবেনা? আমরা চেষ্টা করবো এই চীনাবাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে। তখন বৃহৎ আকারে চাষ হলে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বাংলাদেশের রসুনকেও রপ্তানি করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি বগুড়া যাওয়ার সময় সিরাজগঞ্জে মাঠের পর মাঠ হুলুদে ঢাকা দেখতাম। এই সরিষাও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, যতদিন আমরা আমাদের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি থেকে শুরু করে সকল ফসল ঘরে না তুলতে পারি, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম যে মানুষগুলো আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ আপনাদের প্রতি তাকিয়ে আছে, তাই দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
এর আগে স্মরণসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিশেষ অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা দারুণ একটা সিদ্ধান্ত ছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছিল। কিন্তু পরে সবাই বুঝতে পেরেছে, তারেক রহমানের সেই সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল।
বৃষ্টির কারণে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর ধরে গুম করছে, একের পর এক গুম-খুনের মধ্যে দিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে নিহত ও আহতদের স্মরণ করছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে তরুণদের একটা বড় ভূমিকা আছে। এই ভূমিকায় আছেন তারেক রহমানও। তিনি বলেন, আমি কথা বাড়াব না শুধু বলি, একটা উত্তাল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন।
এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেও নানান স্লোগান দিতে থাকেন।