ঝুঁকিপূর্ণ উপকুলীয় শহরগুলোতে জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করতে নেওয়া হচ্ছে জলবায়ু সহিঞ্চু প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি দেশী ও বিদেশী পরামর্শকদের ভারেন্যুজ। আগামী সাত বছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চার হাজার ১৬৪ জনমাস বা ৪ ডজন পরামর্শকের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মাত্রাতিরিক্ত পরামর্শকদের কারণেই উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। সরকারকে বিরাট আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) নিতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের ২৭টি যানবাহন কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর আগে আপত্তি জানানোর পর ব্যয় প্রস্তাবনা থেকে ব্যয় কমেছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকা বলে পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে। আগামী মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবনার তথ্য থেকে জানা যায়, উপকূলী উন্নয়ন কৌশল (সিডিএস-২০০৬) অনুযায়ী উপকুলীয় ১৯টি জেলার মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ১১টি জেলাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চিহিৃত করা হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ হটষ্পট হিসেবে চিহিৃত করায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে নিয়োগকৃত প্রকল্প প্রস্তুতি কারিগরি সহায়তা (পিপিটিএ) কর্তৃক ১১টি জেলার ৪৩টি পৌরসভাকে নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার তালিকায় আনা হয়। আর জেলাগুলো হলো, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীম বরগুনা, ঝালকাঠি, শরিয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ। এখানে এডিবির বরাদ্দ ২০ কোটি ডলার।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, ঝুঁকিপূর্ণ উপকুলীয় শহরগুলোতে জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করা। বয়স্ক, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধিবান্ধব ২১টি স্কুল কাম সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা। আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবেশের জন্য ৩০৯ দশমিক ৯৮ কিলেমিটার রাস্তা নির্মাণ বা উন্নয়ন করা। ১৪০ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ ও ফ্লাড কন্ট্রোল করা। এক হাজার ৪৫ দশমিক ৮০ মিটার সেতু বা কালভার্ট উন্নয়ন করা। ৪টি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা। চারটি সমন্বিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা স্থাপন। ২টি গ্রিন ওপেন ষ্পেস নির্মাণ। বয়স্ক, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধিবান্ধব বহুমুখী বাজার নিমাণ ২২টি। ৩টি শহর পরীক্ষামূলক প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধান। আর ২২টি বস্তি উন্নয়ন করা। ২৭টি যানবাহন কেনা।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রকল্প ঋণ ও সহায়তা হলো ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এখানে এডিবি কনসেশনাল ঋণ দেবে ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। নিয়মিত ঋণ দেবে এডিবি ৮২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সাত বছরের এ প্রকল্প আগামী ২০২৯ সালের জুনে সমাপ্ত হবে বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
ব্যয়ের তথ্য থেকে জানা গেছে, ৬৬ দশমিক ৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে খরচ ১০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরামর্শক খাতে খরচ হবে ১৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২৯৮.৩৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে খরচ হবে ৭১৩ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটার খরচ ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক হাজার ৪৫দশমিক ৮০ মিটার তৈরী করতে খরচ ১২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। ড্রেন ও ফ্লাড কন্ট্রোল ১৪০ দশমিক ৯৭ কিলোমিটারে খরচ ৪৭১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে খরচ ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২১টি সাইক্লোন সেন্টারে ১০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২১টি মার্কেট নিমাণে ১১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
পরামর্শকের খরচের মধ্যে রয়েছে, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সুপারভিশন পরামর্শক একজন বিদেশী ১২ মাসের জন্য, দেশী ২৭জন, বিস্তারিত ডিজাইন পরামর্শক বিদেশী ১ জন ১২ মাসের জন্য ও দেশী ১০জন, ইন্টারনাল অডিটিং পরামর্শক ৩জন দেশী, প্রাতষ্ঠিানিক দক্ষতা ও যোগাযোগে ৭ জন পরামর্শক।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সূত্র বলছেন, সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখানে ৭ বছর ধরা হয়েছে। এটার কোনো যৌক্তিতা নেই। এখানে ৭টি জীপ, ২৯টি পিকআপ, ২৪টি মটরসাইকেল কেনার যৌক্তিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তখন কমিয়ে ২৭টিতে আনা হয়। এইসব খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন বলা হয়েছে। প্রকল্পের খরচের ব্যাপারে বেশ কিছু অবজারভেশন দেওয়া হয়েছে। সেভাবে পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। তবে এখন ব্যয় কমেছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকা।