ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনী জেলার বিভিন্ন সড়কে মাসে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার টোকেন-স্টিকার দিয়ে বৈধ-অবৈধ মিলে চলছে প্রায় ২৪ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এসব অটোরিকশার নেই কোনো নাম্বার প্লেট, রুট পারমিট কিংবা কোনো বৈধ কাগজপত্র। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ চালকের নেই আবার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
চালকদের দাবি, এই টোকেন সঙ্গে থাকলে তাঁদের পুলিশ আটকায় না কিংবা হয়রানি করে না। আবার বৈধ কাগজ থাকলেও এই টোকেন না থাকলে পোহাতে হয় ঝামেলা।
স্থানীয় লোকজন জানান, অর্থলোভী কিছু গাড়ির মালিক বাড়তি টাকা লাভের আশায় অদক্ষ ও অল্পবয়সী কিশোরদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি। এসব অদক্ষ কিশোরের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে চলাচলরত অন্য পরিবহনগুলোর চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
বৈধ কাগজপত্রের গাড়ি মালিকদের অভিযোগ, তাঁদের কাগজপত্র সঠিক থাকলেও চাঁদার জন্য পড়তে হয় নানা বিপাকে। আবার কাগজ করতে গেলেও ব্যাপক হয়রানির শিকার হন তাঁরা। ফলে চালকেরা টোকেন-স্টিকার বা চাবির রিং দেখিয়ে অবৈধভাবে সড়ক ব্যবহার করছেন। এতে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অবৈধভাবে আদায় করা এসব টাকা পুলিশসহ প্রশাসনকে দেওয়ার কথা বলে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন প্রতি মাসে চালকদের কাছ থেকে টোকেনপ্রতি আদায় করছে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
বিআরটিএ সূত্রমতে, জেলায় নিবন্ধন করা সিএনজির সংখ্যা মোট ৯ হাজার ২০০। এর মধ্যে ৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। আর নিবন্ধিত চালক রয়েছেন ১ হাজার ২৫৫ জন।
সোনাগাজী-ফেনী রুটের সিএনজিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স বানাতে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তার ওপর নানা হয়রানি। অথচ মাসিক ৫০০ টাকা হারে বছরে ৬ হাজার টাকার স্টিকার দিয়ে টেনশন ছাড়াই সিএনজি চালানো যায়।’
নম্বরবিহীন কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাচালক সরোয়ার, আবদুর রহিম ও সালাউদ্দিন জানান, তাঁরা গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগানো স্টিকার বা টোকেন দেখান। অনেক চালক চাবির রিং দেখিয়ে পুরো নোয়াখালী অঞ্চল বিনা বাধায় চলাচল করেন। টোকেন ও স্টিকারের দাম ৫০০ টাকা হলেও এসব চাবির রিংয়ের দাম ১২০০ টাকা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিবন্ধন, ট্যাক্স-টোকেন ও ফিটনেসবিহীন অবৈধ রুট পারমিটের বিরুদ্ধে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। তবে অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান অবৈধ অটোরিকশার চালকেরা। এতে অভিযান ফলপ্রসূ হয় না।
টোকেনের কথা স্বীকার করে ফেনী জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হানিফ বলেন, যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স, ফিটনেস ও ড্রাইভারের কাগজপত্র নেই তারা থানা-পুলিশ বা প্রশাসন থেকে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে টোকেন বা স্টিকার কিনছে। পাশাপাশি সংগঠনের পেছনে কিছু ব্যয় আছে। কেউ মারা গেলে বা দুর্ঘটনার শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে তাদের সমিতি থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। তবে সংগঠন থেকে বিপদের সময় কোনো সাহায্য বা সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম মজুমদার বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। বৈধ কাগজপত্র পেতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্নজন অপকৌশলে গাড়ি চালাচ্ছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।’
ফেনী জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিআরটিএর বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা।’ তিনি দাবি করে বলেন, ‘সিএনজির মালিকেরা নিজেদের সুবিধার জন্য অবৈধভাবে টাকা দিয়ে রাস্তায় চলছে। প্রতি মাসেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিএনজি আটক ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।’
সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘নিবন্ধন করতে এখন কোনো ঝামেলা নেই। নতুন করে নিবন্ধন দিচ্ছে সরকার। অনিবন্ধিত গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে।’