মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
আ’লীগ করার সুফল ১৫ বছরে অবৈধ সম্পদের পাহাড়॥ হেনরী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অবশেষে দুদকের ২ মামলা পরিবারের জিম্মায় মুক্ত হলেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা যমুনা রেলওয়ে ব্রীজ: পরীক্ষামুলক ট্রেন চলাচল শুরু সিরাজগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত সিরাজগঞ্জ পৌর আ’লীগের সহ-সভাপতি ফিলিপস কারাগারে এস আলমের সঙ্গে আর ব্যবসায়ে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে তেল-চিনি কারখানা ঠিকাদারের খোঁজ নেই, ছয় বছরেও শেষ হয়নি ২২ কোটির আইটি প্রকল্পের কাজ নভেম্বরে ১৩ শতাধিক সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি অবৈধ ছিল: হাইকোর্ট আগে সংস্কার, এরপর নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

ঠিকাদারের খোঁজ নেই, ছয় বছরেও শেষ হয়নি ২২ কোটির আইটি প্রকল্পের কাজ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১.৫২ পিএম
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে
Representational image

মাগুরা সংবাদদাতা



মূল ফটকে তালাবদ্ধ। কাজ প্রায় বছর খানিক বন্ধ। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে মাগুরা শেখ কামাল আইটি পার্ক প্রকল্পের নির্মাণাধীন মূল ভবন। দেড় বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেটে গেছে ছয় বছর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নানা অজুহাত ও প্রশাসনিক রদবদলে প্রকল্পটির কাজ আদৌ শেষ হবে কিনা তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আইটিতে দক্ষ করার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের স্থান দেওয়া, একাডেমিয়া এবং আইটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে তরুণদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ থেমে যাওয়ায় এই উদ্দেশ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে সারা দেশের আরও ছয়টি জেলার সঙ্গে মাগুরাতেও শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রকল্প অনুমোদন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে লক্ষ্যে মাগুরাতে আইটি পার্কের জন্য ২০১৭ সালের জুলাই এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। মাগুরা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় সরকারি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৫ একর। ঝিনাইদহের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্স কাজটি শুরু করে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। যার মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। তবে কাজ শেষ হয়নি ২০২৪ সালেও। উপরন্তু কাজ দেড় বছর বন্ধ থাকায় মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

কিন্তু গত দেড় বছরে প্রকল্পটির কোনো কাজই হতে দেখা যায়নি। এদিকে মূল ভবনের কাজ ফেলে রাখায় নষ্ট হতে চলেছে নানা অবকাঠামো। মরিচা ধরে গেছে মূল ভবনের লোহা ও নির্মাণ সামগ্রীতে। অথচ প্রকল্পের মূল খরচ ওই ভবনটি তৈরিতেই। প্রকল্পটি এই ভবন ঘিরেই।

প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্স কাজটি শুরু করার পর থেকে নানা বিতর্কে জড়িয়ে যায়। বরাদ্দকৃত এলাকায় অনুমতি ছাড়া সরকারি গাছে কেটে গোপনে বিক্রি করার অভিযোগে মামলাও করে জেলা প্রশাসন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে প্রশাসনকে চাপও দিতে থাকে লিটন ট্রেডার্স। শেষে ব্যয় বেড়ে ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় দাঁড়ালেও কাজ ধীরগতিতে চলতে থাকে। কয়েক দফা মেয়াদ শেষ হলে তা আবার বাড়িয়ে এখন আইটি পার্কের কাজ ৭ বছরেও গিয়ে ঠেকেছে। তবু স্থানীয়দের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা।

মাহবুব হোসেন নামে স্থানীয় একজন বলেন, অনেক দিন দেখছি কোনো কাজ হয় না। কিছু লোকজন আছে যারা মূলত ভেতরে ঘোরাফেরা করছে। এর বেশি কিছু দেখা যায় না। তরুণদের তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে হলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন খুব জরুরি।

ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং এ কাজ করা তরুণ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমরা যারা আইটি খাতে কাজ করি, তাদের জন্য সরকারি বিশেষ সুবিধা থাকবে, আমরা কম খরচে ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু বাস্তবে দেখছি এ প্রকল্পটি ইচ্ছে করে ধীরগতির করা হয়েছে। এখানে শুধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই অলস বা চতুর বলা যাবে না। প্রশাসনের নানা রদবদলে এটা আরও ধীরগতির হয়ে গেছে। এর সমাধান দরকার। প্রয়োজন হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে হবে।’

কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্সের কাউকে প্রকল্প এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, লিটন ট্রেডার্সের মালিকপক্ষ ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এখন আত্মগোপনে রয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর মাগুরা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রোগ্রামার মো. মুন্না বলেন, ‘আমরা তো এখনো ভবনটি বুঝে পাইনি। যার ফলে অনেক কাজের সমস্যা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আমরা ঠিকমতো পাচ্ছি না। তারা বছর খানিক আগে বলেছিল, কাজটি প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। শেষ দিকের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শুনেছি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে মাগুরার জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আসার পর এই প্রকল্পটি দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ঝোপঝাড় হয়ে আছে। জেনেছি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এত বড় ও সম্ভাবনাময় প্রকল্পটির বাস্তবায়নে আমি প্রকল্পের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। প্রকল্পটি শেষ করতে অন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া লাগলেও তা বাস্তবায়ন করতে আমি চেষ্টা করব। প্রকল্পটির মেয়াদ শুনেছি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com