বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ক্রসবার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার গাড়ি পারাপার: টোল আদায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত, আহত তিন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত দুই ফুট বাঁধই ভরসা, আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত কাটে খুলনা উপকূলবাসীর খুলনা অঞ্চলের ভরত ভায়না দেউল হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র খুলনায় সড়ক বিভাগের বাধায় বন্ধ কেসিসির ৭ মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সাবেক এমপি আজিজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

তীব্র দাবদাহে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪, ৬.১০ পিএম
ছবি: সংগ্রহীত

রাজশাহী সংবাদদাতা॥

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। লাল মাটির বরেন্দ্র অঞ্চলে তিন ফসলি জমিতে অনেকে বাধ্য হয়েই ফলজগাছ রোপণ করেছেন। কারণ অন্য ফসলে সেচ সংকট। আর এ ফলজ গাছের বড় অংশই আম গাছ। বছরে একবার করে ফল আসে অধিকাংশ গাছে। একটি মৌসুম জুড়ে তাই থাকে বাগানিদের আমে ভরা বাগানের প্রত্যাশা। তবে এবার সে প্রত্যাশাই শুরু থেকেই বাঁধ সেধেছে প্রতিকূল আবহওয়া।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানে গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। অনেক গাছের মুকুল এবার এসেছে বিলম্বে। তবে শেষ পর্যন্ত যে মুকুল এসেছিলো, তাই নিয়েই স্বপ্ন বুনছিলেন চাষিরা। তবে প্রতিকূল আবহওয়ার মুকুল ঝরেছে। এখন ঝরছে গুটি। প্রতিবছর যে গাছগুলোতে আম মুকুলে পূর্ণ থাকে এবার সেখানে ভিন্ন চিত্র। অনেক গাছে এখন শুধু পাতায় পূর্ণ। নেই একটিও আমের গুটি! আর এতেই উৎপাদন নিয়ে হতাশায় চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। এগুলোতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর এ অঞ্চলে আম উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন। এবার উৎপাদনে ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চারঘাট উপজেলার আম চাষি আমানুল হক। তার এবার ১০ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। তিনি জানান, তার বাগানে এবার মুকুল কম এসেছিলো। তাও যেটুকু ছিলো, তা নিয়ে আশা ছিলো। কিন্তু এখন গুটি শূন্য হয়ে যাচ্ছে অনেক গাছ।

বাঘার আরেক আম চাষি শফিকুল ইসলাম সানা। গত বছর প্রায় এক কোটি টাকা আম বিক্রি করেছিলেন। তার মধ্যে ২৬ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানিও করেছিলেন। এবারও শফিকুল ৩০০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। তবে এবার গাছে গুটি কম থাকায় হতাশ তিনি।

শফিকুল জানান, গত বছর তার বাগানে প্রচুর আম হয়েছিল। সে তুলনায় এবার আম যে পাবেন না, তা গাছ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চৈত্রের খরতাপ উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে জানান তিনি।

শিবগঞ্জের আমচাষি আহসান হাবিব বলেন, এবার বাগানে প্রায় ৭০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। মার্চ মাসের ২০ ও ২১ তারিখে যে বৃষ্টি হয়েছিল, সেই বৃষ্টিতে সব মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া যে আমগুলো গাছে ঝুলছিল, এর সিংহভাগ খরায় ঝরে যাচ্ছে। এতে খরচ উঠবে না।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর এলাকার আমচাষি শাহাৎ হোসেন বলেন, চলতি বছর ছয় বিঘার একটি বাগানে অল্প গুটি এসেছিল। সেই গুটি ধরে রাখতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। প্রায় দিনই সেচসহ কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। তার পরও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। এতে আমের ফলন বিপর্যয় ঘটবে।

‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ বিঘার একটি বাগান কিনি সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। সেই বাগানে মুকুল ও গুটি কম এসেছে। এতে বাগানে ২ লাখ টাকারও আম উৎপাদন হবে না। চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’ বলেন সদর উপজেলার রাণীহাটি এলাকার বাগান ব্যবসায়ী এখলাসুর রহমান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চাষিদের খুবই সতর্কতার সঙ্গে গাছ পরিচর্যা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে। পাশাপাশি নানান ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পলাশ সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে আমের অফইয়ার ধরা হয়েছে। কারণ গত বছর প্রচুর পরিমাণে আম এসেছিল। এবার মুকুল ও গুটি কম এসেছে। সেই গুটি টিকিয়ে রাখতে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের নানান পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক জানান, এবার নওগাঁয় নতুন আম বাগানে প্রচুর মুকুল এসেছে। তবে অপেক্ষাকৃত কম মুকুল এসেছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে। গত বছর যেসব গাছে প্রচুর আম ধরেছিল, সেসব গাছে এবার কম ফল ধরতে পারে। এই পরিস্থিতি আবহাওয়া, পরাগায়নের সমস্যা ও রোগবালাই ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত শতকার ২০ ভাগ গাছে এক বছর পরপর ফল আসে। তবে এ কারণে ফলনের তারতম্য কমই ঘটে থাকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com