ডেস্ক রিপোর্ট॥
দেশেই তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গু টেস্ট কিট। এই কিট দিয়ে ১০ মিনিটেই ডেঙ্গু শনাক্ত করা যাবে। আর পরীক্ষার খরচও নেমে আসবে অর্ধেকে। এই কিট শতভাগ সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম দাবি গবেষকদের।
বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্-বিআরআইসিএম এরই মধ্যে অ্যান্টিজেন কিটটি তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মালা খান।
তিনি বলেন, প্রায় আড়াই বছর গবেষণার পর সফলতা ধরা দিয়েছে তাদের হাতে। এরই মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ১০০ জনের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যেখানে শতভাগ সফলতাও এসেছে বলে দাবি তার।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গবেষণা ও পরীক্ষার প্রতিষ্ঠিত নিয়ম মেনেই প্রতিটি ধাপ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। সব তথ্য পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-বিএমআরসি’র অনুমোদন মিলেছে।
সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর-ডিজিডিএ উৎপাদনের অনুমোদন দেয়। এখন বিআরআইসিএম ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট তৈরি শুরু করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা জানান, ৪ ডিগ্রি থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে এই কিট। যা বাজারে পাওয়া অন্য কিটগুলোর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে।
গবেষক দলের সদস্য মাহমুদুল হাসান বলেন, অ্যান্টিজেন এই কিটে সিরাম, প্লাজমা ও রক্তের মাধ্যমে ফলাফল জানা যাবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর ধরন ‘ডেন-৪’ও এই কিটে শনাক্ত করা যাবে।
মালা খান বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তকরণে বর্তমানে দেশে যেসব কিট ব্যবহার করা হচ্ছে তা শতভাগ আমদানি করা। যার জন্য ১৪০ থেকে ১৯৫ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু, দেশে তৈরি এই কিটে খরচ হবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর ১০ মিনিটেই ফলাফল পাওয়ার কারণে বেশি বেশি পরীক্ষা করা যাবে।
প্রতিদিন এক লাখ কিট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বিদেশ নির্ভরতা কমাবে। পাশাপাশি সংরক্ষণ করা সহজ হওয়ার কারণে দেশের বাইরে রফতানিও করা যাবে। তবে দেশের বাইরে রফতানি করতে গেলে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা হলেও পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ক্রস রিএক্টিভিটি’ বলা হয়। দেশে তৈরি এই কিটে তা হবে না বলেই দাবি গবেষকদের।
তারা বলছেন, করোনা, জিকা ও চিকনগুনিয়া ভাইরাসের প্রভাব থাকলেও ডেঙ্গুর ফলাফল শতভাগ সঠিক দেবে নতুন এই কিট। অর্থাৎ এখানে ‘ক্রস রিঅ্যাক্টিভিটি’ নেই। পাশাপশি এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ বা ফলস পজেটিভ আসারও সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কিট আমদানি করা হয়। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর দাম উঠানামা করে। আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না, গেল বছর এমন সমস্যার কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা বন্ধ ছিল। নিজেরা এমন কিট তৈরি করতে পারলে সেই সমস্যার দূর হবে।