শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

পানিশূন্য তিস্তা, কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪, ১১.১২ এএম
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

উত্তরের তিস্তা নদীতে পানি নেই। শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেচের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আবাদ নিয়ে চিন্তায় লাখো কৃষক।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারেজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যারেজের ভাটিতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানিও সরবরাহ নেই।

তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। কিন্তু পানি না পাওয়া ও দেরিতে পাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকল্প এলাকার অনেক কৃষক। একই এলাকার অনেক কৃষককে দ্বিগুণ খরচে বিকল্প উপায়ে সেচ দিতে হচ্ছে।

সুবিধাভোগীরা বলছেন, নদীতে পানি না থাকায় তারা আবাদ নিয়ে বেকায়দায় আছেন। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করায় বেশির ভাগ সেচনালা কোনো কাজেই আসছে না।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তর জনপদের ৮ জেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ব্যারেজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়। পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা। ফলে চড়া দামে ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।

পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকে। অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকে। সে সময় সেচের জন্য তিস্তায় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক পানি থাকা দরকার।

কৃষকেরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পুরো মৌসুমের জন্য সেচ প্রকল্প থেকে পানি নেওয়া হলে খরচ পড়ে ২০০ টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প থেকে পানি নিতে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের পানির খরচ আরও বেশি।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন’র কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেচ খাল সংস্কার করলেও তা কাজে আসবে না। তিনি আরও বলেন, উজানের পানি ব্যারেজের জলকপাট বন্ধ করে সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো রোপণ করে। এ সময় নদীতে পানি থাকে না। আবার ভুট্টা লাগানো হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তখন পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু মাঠে রবিশস্য (ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, আলু) ও পাকা আমন ধান থাকে। ফলে ক্যানেলে পানি ছাড়া সম্ভব হয় না। এ জন্য সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর সময় এগিয়ে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর তিস্তা নদী খনন ও ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বহিরাঙ্গন কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা ‘বিকল্প ভেজানো ও শুকানো’ (এডব্লিউডি) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। এ পদ্ধতিতে কম সেচে ফসল আবাদ হয়। কিন্তু সেচ প্রকল্পের পানি বণ্টন পদ্ধতিতে এভাবে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। এ কারণে সেচ ক্যানেলের পানি কাজে আসছে না বেশির ভাগ কৃষকের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com