সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

পুঁজিবাজারে বেহাল দশা: ২১৪ কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন আড়াই কোটির কম

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২, ৯.৪৮ এএম
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হওয়া ২২৯টির লেনদেন ছিল একেবারেই নগণ্য। এতগুলো কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে কেবল ১৪ কোটি ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন ১১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

দুই দিন পতন শেষে সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়লেও বাজারে হতাশার চিত্র পাল্টায়নি এতটুকু।

এদিন হাতবদল হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর কমেছে কেবল ছয়টির, বেড়েছে ৭৮টির। সূচক বেড়েছে ৩৯ পয়েন্ট। তারপরও বিনিয়োগকারীরে মধ্যে স্বস্তি ফেরার কোনো আভাসই নেই।

আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও ফেরেনি লেনদেনের গতি বা ভারসাম্য। ৩৯০টি কোম্পানির মধ্যে ১১টির লেনদেন স্থগিত ছিল লভ্যাংশ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় তিন শটির কার্যত ক্রেতা ছিল না।

কোনো শেয়ার হাতবদল হয়নি, এমন কোম্পানি ছিল অবশ্য ৬৬টি। তবে ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হওয়া ২২৯টির লেনদেন ছিল একেবারেই নগণ্য। এতগুলো কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে কেবল ১৪ কোটি ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

এর মধ্যে আবার বেক্সিমকো লিমিটেড, এডভেন্ট ফার্মা, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, রহিমা ফুড, শমরিতা হাসপাতাল, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, বিএসআরএম স্টিল, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, জেএমআই সিরিঞ্জ, খান ব্রাদার্স, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক- এই ১৫টি কোম্পানিতে লেনদন হয়েছে ১১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাকি ২১৪টি কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

লাখ লাখ শেয়ার বসানো থাকলেও ক্রেতার ঘর দিনভর ছিল ফাঁকা। এর মধ্যে আগে থেকে না বসিয়ে ফ্লোর প্রাইসে কিছু কিছু শেয়ার কিনেছেন কেউ কেউ।

এই কিছু শেয়ার যে হাতবদল হয়েছে, তা কেমন ছিল?

১৫টি কোম্পানির কেবল একটি করে, আরও ১৮টি কোম্পানির ২ থেকে ১০টি, ৯টি কোম্পানির ১১টি থেকে ২০টি, ৯টি কোম্পানির ২১ থেকে ৫০টি, ২০টি কোম্পানির ৫১ থেকে ১০০টি, ৩৮টি কোম্পানির ১০১ থেকে ৫০০টি, ২৪টি কোম্পানির ৫০১ থেকে ১ হাজারটি, ৫১টি কোম্পানির ১০০১ থেকে ৫ হাজারটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল ৬৬টি কোম্পানির। এক লাখ টাকার কম লেনদেন হয়েছে ১৫৪টি কোম্পানিতে।

সব মিলিয়ে এদিন লেনদেন হয়েছে ৪২৮ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার টাকার, আগের দিন যা ছিল ৩৫১ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

কিছুদিন আগেও এক ঘণ্টাতেই এই পরিমাণ লেনদেন হতো।

এদিন যে পরিমাণ লেনদেন হয়েছে তার ৭৬ শতাংশ, অর্থাৎ ৩২৬ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার টাকা হাতবদল হয়েছে দর বৃদ্ধি পাওয়া ৭৮ কোম্পানিতেই।

এমনকি দর হারানো ৬ কোম্পানির লেনদেনই ফ্লোরে থাকা ২২৯টির চেয়ে বেশি। এসব কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

মৌলভিত্তির কোম্পানিরও করুণ চিত্র

বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে বহুজাতির কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ারের একজনও ক্রেতা ছিল না। সে সময় ফ্লোর প্রাইসে বিক্রেতা ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬২৪ জন।

একই সময় স্কয়ার টেক্সটাইলের ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭০১১টি শেয়ার সর্বনিম্ন দরে বসিয়েও ক্রেতা পাচ্ছিলেন না কেউ।

বছরের পর বছর ধরে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়ে আসা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ক্রেতা ছিল না একজনও। ফ্লোর প্রাইসে বসিয়ে রাখা ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৯০২টি শেয়ার।

ওষুধ খাতের শক্তিশালী কোম্পানি রেনাটার ৭০ হাজার ৫৩৯টি শেয়ার বসানো ছিল, কিন্তু ক্রেতার ঘর ছিল শূন্য।

কিছুদিন আগেও দিনে দুই শ বা আড়াই শ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া বেক্সিমকো লিমিটেডের চিত্রও একই রকম করুণ। বেলা ২টা ২০ মিনিটে এই কোম্পানিটির ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬০১টি শেয়ার বসানো ছিল, কিন্তু ক্রেতার ঘর ছিল ফাঁকা।

আর্থিক খাতের শক্তিশালী কোম্পানি ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৩টি, আইডিএলসির ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৩১২টি, মাস কয়েক আগেও তরতর করে দাম বাড়তে থাকা আইপিডিসির ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫৩টি, ব্যাংক খাতে শক্তিশালী কোম্পানি ব্র্যাকের ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫টি শেয়ার বসানো ছিল, ক্রেতার অভাবে যেগুলোর বিক্রেতার ঘর ছিল ফাঁকা।

এমনকি তালিকাভুক্তির পর সপ্তম দিবসেই ক্রেতাশূন্য ছিল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের। বেলা ২টা ২১ মিনিটে অভিহিত মূল্যের ১০ শতাংশ কমে বসানো ছিল ৭৭ লাখ ২৭ হাজার ২১৯টি শেয়ার। অর্থবছর শেষ হতে চলেছে, এর মধ্যেও আইপিওর শেয়ার হওয়ার কথা ছিল আকর্ষণীয়। কিন্তু ১০ শতাংশ লোকসান দিয়ে তা ছেড়ে দিতে চাইছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ক্রেতার অভাবে সম্ভব হচ্ছে না।

এসব কোম্পানির লেনদেন একেবারে হয়নি এমনকি নয়, তবে পরিমাণ ছিল নগণ্য। এদিন ক্রেতা ছিল না মোট ৭৮টি কোম্পানির শেয়ারে। বাকি যেসব কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে, তার মধ্যে ২২০টির লেনদেন ছিল একেবারেই তলানিতে। এসব কোম্পানির মধ্যে আছে মৌলভিত্তির অসংখ্য লাভজনক উদ্যোগ, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়ে আসছে এবং বিশ্ব সংকটের মধ্যেও যাদের ব্যবসা চলমান।

গত আগস্ট থেকেই পুঁজিবাজারের লেনদেন অল্প কয়েকটি কোম্পানিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, লেনদেন ভালো হচ্ছে এমন কোম্পানির সংখ্যাও কমছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com