ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা॥
ঠাকুরগাঁওয়ের ফসলি মাঠ জুড়ে একসময় আবাদ হত গম, ভুট্টা, আলু ও সরিষা। বিস্তৃত মাঠ জুড়ে দেখা যেত এসব ফসলের আবাদ।
কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে নানা ধরনের ফসল আবাদ করছেন জেলার চাষিরা। ইতিমধ্যে চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পতিলাভাসা গ্রাম। গ্রামের ফসলি মাঠে চারপাশে এখন সাদা রঙের পেঁয়াজ ফুলের সমাহার। একটা সময় কৃষকেরা আলাদা ফসল চাষাবাদ করলেও এখন উৎপাদন করেন পেঁয়াজ বীজ। গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবারের মৌসুমে ভালো বীজ পেতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খেতে সময় পার করছেন কৃষকেরা। কেউ সেচ দিতে, কেউ আবার পোকা দমনের কীটনাশক স্প্রে নিয়ে, কেউ হাতের আলতো ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছরে নভেম্বর মাস পেঁয়াজ বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে ১৩০-১৫০ দিন। পরাগায়ন না হলে পেঁয়াজ ফুলে পরিপক্বতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকেরা খেতে কীটনাশক ছেটান। কিন্তু সেই কীটনাশকে মারা পড়ছে উপকারী পোকা ও মৌমাছি। এ কারণে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনা কমে যাচ্ছে। তাই হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করেন চাষিরা।
ঠাকুরগাঁও জেলায় চলতি মৌসুমে ১১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হেক্টর কম। প্রতি হেক্টরে ৯০০ কেজি বীজ উৎপাদনের আশা রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা। পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে সেচ প্রদান, কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ও কীটনাশক ছিটানোর কাজ করেন শ্রমিকেরা। এ পারিশ্রমিকের আয়ের সংসার চলে তাদের।
চাড়োল ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি করা যায় প্রায় দুই লাখ টাকার বীজ। এতে করে স্বল্প সময়ে ভালো দাম পাওয়ায় আমাদের লাভ হচ্ছে। তবে বীজের ন্যায্য দাম পেতে কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আরও লাভবান হতে পারব।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভালো দাম পাওয়ায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলা কৃষকেরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।