অনলাইন ডেস্ক॥
সর্বনিম্ন দর বেঁধে রাখায় অনেকে এতদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে ফ্লোর প্রাইস ওঠার প্রথম দিন যে দরপতন হবে, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল।
শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঢাকার শেয়ারবাজার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর প্রথম আধা ঘণ্টায় লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৪৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২২টি বা ৯২ শতাংশের দাম পড়ে যায়।
ওই সময় পর্যন্ত কেবল ১৪টি শেয়ারের দাম বাড়ে, ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের তখন পর্যন্ত লেনদেন হয়নি।
প্রথম আধা ঘণ্টায় ডিএসইর সূচক ১৬৮ পয়েন্ট হারায়। ডিএসইএক্স ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট থেকে নেমে আসে ৬ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে।
পতনের সূচনা হয় লেনদেন শুরুর পরপরই। লেনদেন শুরুর পর ছয় মিনিটের মাথায় ডিএসইএক্স ৬ হাজার ১২১ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করলে ধীর গতিতে বাড়তে থাকে সূচক। এক ঘণ্টার লেনদেন শেষে সূচক পৌঁছায় ৬ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে।
আর দেড় ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টায় সূচক কমে হয় ৬ হাজার ১৯২ পয়েন্ট। তখন পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ৩৬৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩১৮টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে কেবল ২৯টির। সব মিলিয়ে ২৭১ কোটি টাকার শেয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত হাতবদল হয়েছে।
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে ৩৫৭টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে তিন বিবেচনায় ৩৫ কোম্পানিতে ফ্লোর বহাল রাখা হয়েছে।
সর্বনিম্ন দর বেঁধে রাখায় অনেকে এতদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে ফ্লোর প্রাইস ওঠার সুযোগে অনেকেই শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। সে কারণে ফ্লোর প্রাইস ওঠার প্রথম দিন যে দরপতন হবে, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল।
এসব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতই ১০ শতাংশই থাকছে। অর্থাৎ, কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় শেয়ারদর ক্রমশ কমতে থাকায় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মত ফ্লোরপ্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়।
ওই বছরের জুন থেকে প্রথমে বীমা খাত ও পরে আরো কিছু খাতের শেয়ারদর বাড়তে থাকলে ধাপে ধাপে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল কমিশন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর আতঙ্কে আবার পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হলে দ্বিতীয়বারের মত ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয় ২৮ জুলাই।
বিনিয়োগকারীদের একাংশের দাবির মুখে একই বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর এমন কোম্পানিও দেখা যায়,
তার দর টানা ৪০ কর্মদিবস এক শতাংশের কাছাকাছি কমেছে। পরে ২০২৩ সালের মার্চে আবার এসব কোম্পানিতে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে সূচক মোটামুটি একটি বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও শেয়ারের লেনদেন একেবারেই কমে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা অর্ডার বসিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না। লেনদেনও কমে আসে অনেকটাই।
ওই অবস্থায় ফ্লোর তুলে স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনসহ বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায় বিএসইসিকে। তবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোনো ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি বিএসইসি।