গাজীপুর সংবাদদাতা॥
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের বাসায় বন্ধুকে নিয়ে চুরি করতে গিয়েছিলেন। তবে বিষয়টি টের পেয়ে ভয়ে চিৎকার করলে বোনকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ভাই। এ ঘটনায় বন্ধুসহ আপন ভাইকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।
এর আগে, গত ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় কাপাসিয়া উপজেলার পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর মরদেহ নিজ বসতঘর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারী কাপাসিয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করনে। ওই মামলায় নিহত শাহনাজ বেগম শিমুর ছোট ভাই কামরুজ্জামান রুবেল ও শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মো. মিনাল ওরফে মিস্টারকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
জানা যায়, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের ঘরে বন্ধুকে নিয়ে চুরি করার পরিকল্পনা করে রুবেল। এ সময় বোন চিৎকার করলে তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয় তারা। পরে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাপাসিয়া
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের নিজ বসতঘর থেকে প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ্ ইমরান বলেন, নিহত শিমুর আপন ছোট ভাই রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতো। পাঁচ মাস আগে রুবেল ওই হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিলে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে। পরে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে সে। এরই ধারাবাহিকতায় অপর আসামি মো. মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
পরবর্তীতে রুবেল ও মিনাল গভীর রাতে শাহনাজ আক্তারের ঘরের জানালা খুলে চুরির উদ্দেশে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে শিমু চিৎকার দিলে মিনাল ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায় এবং রুবেল শিমুর হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। একপর্যায়ে মিনালের সঙ্গে শিমুর ধস্তাধস্তি হলে মিনাল শিমুর মুখে আঘাত করে এবং শিমুর বুকের ওপর বসে গলা চেপে ধরে। এরপর আসামি রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মোবাইল নিয়ে শিমুর হাত ও পা-বেঁধে রেখে চলে যায়।
ঘটনার পরদিন সকালে রুবেল চাকু, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙে ঝাজর এলাকায় ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেয় এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে। এ ঘটনায় রুবেলকে গ্রেফতারের পর স্বর্ণ বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরের ঝাজর কবরস্থান ব্রিজের নিচে খাল থেকে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাইকৃত মোবাইল সেটের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, নিহতের ভাই রুবেল ও মিনাল স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।