এফবিডি ডেস্ক॥
দেশের অর্থপাচার বন্ধের উপায়, কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গবেষণা সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অধীনে সেলটি পরিচালিত হবে।
সোমবার এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সেলটির কার্যক্রম শুরু করতে অনুমোদন দিয়েছেন।
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “আগে একটি বিভাগের অধীনে এই গবেষণার কাজটি করা হতো। এখন একটি ডেডিকেটেড সেল অর্থপাচার ঠেকাতে গবেষণার কাজটি করবে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কেমন তা পর্যালোচনা করা হবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গবেষণা সেলটি পরিচালিত হবে।
অর্থপাচার প্রতিরোধের দায়িত্ব বিএফআইইউ-এর ওপর থাকলেও, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক তথ্য সংস্থাটি প্রকাশ করে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যই দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।
গত অর্থবছরে আমদানিতে উল্লম্ফন হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপে পড়ে বাংলাদেশ, যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে।
গত অক্টোবরের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেছিলেন, “২০% থেকে ২০০% পর্যন্ত বেশি দর দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে।”
“কোন মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়”- এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হয় ‘সবচেয়ে বেশি’।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকবার জানিয়েছেন, গত জুলাইয়ের আগে সম্পন্ন হওয়া আমদানি-রপ্তানির এলসি তথ্য বিশ্লেষণে পণ্যর দর বাড়ানো ও কমানোর বিষয়টি তিনিও দেখতে পেয়েছেন। তাদের ধারণা, ২০% থেকে ২০০% পর্যন্ত বেশি দরে পণ্য আমদানি হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। আবার কম দর দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছ।
বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এমন ১০০টি এলসি বন্ধ করার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
অর্থপাচার নিয়ে অর্থনীতিতে এমন আলোচনার মধ্যেই গবেষণা সেল গঠনের উদ্যোগটি এলো।
এ সেলের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে-
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার প্রতিরোধের বিদ্যমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা।
অর্থপাচার বন্ধে উপায় বের করতে গবেষণা করা।
পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নেওয়া উদ্যোগ বিশ্লেষণ করা। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য গ্রহণীয় পদক্ষেপের প্রস্তাব তৈরি।
বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও সফলতা পাওয়া ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা।
পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সন্ধানে যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।
অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিদ্যমান আইনে সংশোধনের কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকলে তার সুপারিশ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করার কথা গত অক্টোবরে আদালতে হলফনামা আকারে জমা দিয়েছে বিএফআইইউ।
এই দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বেশিরভাগের গন্তব্য এসব দেশই বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে জনবল বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনও নতুন জনবল বুঝে না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএফআইইউ’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা।
আইন অনুযায়ী, বিএফআইইউ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও জনবল, অবকাঠামো, অর্থসহ সামগ্রিক লজিস্টিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।