রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জ থেকে লুট হওয়া ৩ কোটি টাকা মুল্যের ফার্নেস অয়েল সিরাজগঞ্জে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫ সিরাজগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য হেনরীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ আ’লীগ করার সুফল ১৫ বছরে অবৈধ সম্পদের পাহাড়॥ হেনরী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অবশেষে দুদকের ২ মামলা পরিবারের জিম্মায় মুক্ত হলেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা যমুনা রেলওয়ে ব্রীজ: পরীক্ষামুলক ট্রেন চলাচল শুরু সিরাজগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত সিরাজগঞ্জ পৌর আ’লীগের সহ-সভাপতি ফিলিপস কারাগারে এস আলমের সঙ্গে আর ব্যবসায়ে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে তেল-চিনি কারখানা ঠিকাদারের খোঁজ নেই, ছয় বছরেও শেষ হয়নি ২২ কোটির আইটি প্রকল্পের কাজ নভেম্বরে ১৩ শতাধিক সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়

বালিয়াকান্দির পান যাচ্ছে বিদেশেও, চাষিদের আয় ৭০ কোটির বেশি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ১.৪২ পিএম
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

স্থানীয় বাজারে প্রতি পণ পান আকার ভেদে ৪০ থেকে ১২০ টাকায় এবং রপ্তানির জন্য বাছাই করা পান ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

ডেস্ক রিপোর্ট॥

সাচি ও মিষ্টি এই দু’ধরনের পান উৎপাদন করেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির চাষিরা। এর মধ্যে মিষ্টি পান দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও হচ্ছে। ফলে বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি আয় করছেন উপজেলার পানচাষিরা।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির আগে এই উপজেলার পান আটটি দেশে রপ্তানি করা হত। তবে এখন যাচ্ছে চার দেশে। তাতে স্থানীয় ও বিদেশের বাজার থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭০ থেকে ৭৬ কোটি টাকার পান বিক্রি করছেন চাষিরা।

তিনি জানান, এ বছর ৮৫ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৪টি পানের বরজ রয়েছে। যার মধ্যে ৫১৬টি সাচি পান ও ২৯৮টি মিষ্টি পানের বরজ। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ঢাকার বাজারে দুই ধরনের পানেরই চাহিদা থাকলেও শুধু মিষ্টি পানই বিদেশে যাচ্ছে।

তবে রপ্তানি থেকে আয়ের সঠিক অঙ্ক জানাতে পারেননি এই কৃষি কর্মকর্তা।

বরজের পান গাছের পরিচর্যা করছেন এক চাষি।

বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি, বহরপুর এলাকায় পানের বরজ বেশি দেখা যায়।

সরেজমিনে এসব এলাকায় দেখা যায়, পান বরজ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ পান রোপণের জন্য বরজ তৈরি করছেন, কেউ পুরাতন বরজ মেরামত করছেন, কেউবা আগাছা পরিষ্কার করছেন। অনেক চাষিই পান পাতা সংগ্রহ করছেন বাজারে বিক্রির জন্য।

চাষিরা জানান, প্রতি শতকে প্রায় ৫০০ গাছ থাকে। প্রতিটি গাছ থেকে সপ্তাহে দু’বার দুই থেকে তিনটি করে পাতা সংগ্রহ করা হয়।

পান পাতা বাজারে বিক্রি হয় পণ হিসেবে। প্রতি পণে ৮০টি পাতা থাকে। স্থানীয় বাজারে প্রতি পণ পানের দাম পাওয়া যায় ৪০ থেকে ১২০ টাকা। অর্থাৎ আকার ভেদে প্রতিটি পাতা ৫০ পয়সা থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হয়। এসব পান রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান পাইকাররা।

তবে রপ্তানির জন্য বাছাই করা ভালো মানের পান পাতা প্রতিটি ২ টাকা করে বা প্রতি পণ ১৬০ টাকায়ও বিক্রি হয়।

আড়কান্দি গ্রামের পানচাষি স্বপন কুমার দে জানান, পান গাছ একবার রোপণ করলে অন্তত দশ বছর পাতা সংগ্রহ করা যায়। এক পাখি জমিতে খরচ হয় এক লাখ টাকার বেশি।

অন্যদিকে পান গাছের রোগ বালাই একেবারেই কম, পরিচর্যাও কম করতে হয়। শুধু বছরে একবার করে বরজের মাচা মেরামত করতে হয়।

কৃষক মো. আজিজুল শেখ বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে পান চাষ শুরু করেছেন। পানের মাচা তৈরি থেকে শুরু করে, সার-বীজ, বেড়া দেওয়াসহ খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। প্রথম বছরেই সেই টাকা উঠে আসে।

তবে বাজারে এখন দাম ভালো থাকায় মাঝে মধ্যেই বরজ থেকে পান চুরি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারাও দিতে হচ্ছে বলে জানান এই চাষি।

একই সমস্যার কথা জানালেন স্বপন কুমারও। তিনি বলেন, “পান চুরি ঠেকাতে প্রশাসন মাঝে মধ্যে টহলের ব্যবস্থা করলে পানচাষিরা আরও লাভবান হবেন।”

এই কৃষকরা আরও জানান, পান চাষে কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দেয়।  কিন্তু রপ্তানিমুখী এই ফসলের উৎপাদন ও পাতার গুণগত মান বাড়াতে যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু তা তারা পাচ্ছেন না।

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “করোনার আগে এই উপজেলার পান ভারত, পাকিস্তান, ভূটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া- এই আটটি দেশে রপ্তানি করা হত। করোনায় এলসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানিও বন্ধ ছিল।

“আবারও বাইরের দেশে পান রপ্তানি শুরু হয়েছে। বতর্মানে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ চারটি দেশে পান রপ্তানি হচ্ছে। অনান্য দেশে রপ্তানির জন্য কৃষি অধিদপ্তর চেষ্টা করছে।

“করোনার আগে যেসব দেশ পান নিত তাদের সাথে চুক্তি হয়ে গেছে। খুব দ্রুতই সে দেশগুলোতে পান রপ্তানি শুরু হবে,” বলেন এই কর্মকর্তা।

কোনো কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে হলে কৃষি অধিদপ্তরে মাধ্যমেই পাঠানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “উপজেলার চাষীদের উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য পান প্রথমে শ্যামনগর প্যাকেজিং হাউজে নেওয়া হয়। সেখানে শর্টিং ও  গ্রেডিং করা হয়। পরে আমরা কৃষকদের একটা সনদ দিয়ে থাকি। এরপর ওই পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়।”

চাষিদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “জেলার মধ্যে শুধু বালিয়াকান্দিতেই বেশি পান চাষ হয়। এটার উপরে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিই না। শুধু পরামর্শই দেওয়া হয়।”

বালিয়াকান্দি থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন  বলেন, চাষিদের পান চুরির বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com