এফবিডি ডেস্ক॥
অর্থনৈতিক মন্দার বলয়ে আটকে আছে যুক্তরাজ্য। অর্থনীতির চাকা সচল করে জনজীবনকে স্বস্তি দিতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের মিনি বাজেটে ব্যাপক হারে কর কমিয়েও পাওয়া যায়নি সুফল। এবার অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বড় করের দিকে মনোযোগী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কমিয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। তবে এরইমধ্যে বাড়তি করের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে। বর্তমানে এ খাতে ২৫ শতাংশ করের আইন থাকলেও আগামী জানুয়ারিতে তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে উৎপাদন ঠিক রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে ফরাসি তেল জায়ান্ট কোম্পানি টোটাল এনার্জি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্তর সাগরে নতুন কূপের জন্য ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়া হবে। যার ফলে টোটাল এনার্জি ১০ কোটি ইউরো কম খরচ করবে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক দফায় বেড়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম। অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল অঙ্কের মুনাফা অর্জন করেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার উইন্ডফল ট্যাক্সের আওতায় বাড়তি আয়ের উপর করারোপ করেছে ব্রিটিশ সরকার। আগামী ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত জ্বালানি খাতে এ কর কার্যকর থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে তেল ও গ্যাস ফার্মগুলোর উপর উইন্ডফল ট্যাক্সের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশটির অর্থ বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা স্পষ্ট বলেছি অর্থনীতি, চাকরি এবং জ্বালানি খাতকে সুরক্ষা দিতে এ পুনঃবিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে চাই। যুক্তরাজ্যে কোনো ফার্ম যত বেশি বিনিয়োগ করবে, তারা তত কম কর দেবে।
তবে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে উত্তর সাগরীয় অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তেল ও গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টোটাল এনার্জির ইউকে চেয়ারম্যান জিন-লুক গুইজিউ বলেন, “যুক্তরাজ্যের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এখন আমরা বর্তমান পরিকল্পিত প্রকল্পগুলোতে এই পরিবর্তনের প্রভাব কেমন হবে তা মূল্যায়ন করছি। এটি আমাদের এলগিন গ্যাস ক্ষেত্রে একটি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনাকেও প্রভাবিত করবে৷”
নতুন করারোপের প্রতিক্রিয়ায় স্কটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “এই সিদ্ধান্তটি যুক্তরাজ্যে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও প্রভাবিত করবে। স্কটিশ শিল্পও এর খারাপ প্রভাবের বাইরে থাকবে না। তাই আমরা স্পষ্ট করে বলেছি উইন্ডফল ট্যাক্সের বাস্তবায়ন অবশ্যই সেক্টর এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।”
বিশ্বজুড়ে কোভিড বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় তেলের দাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার পর মে মাসে উত্তর সাগরে কাজ করা তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর উপর উইন্ডফল ট্যাক্স চালু করা হয়। ফলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে ১৯ শতাংশ হারে কর প্রদান করছে, সেখানে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদকদের ২৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হচ্ছে। আগামীতে এ করের হার বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫ শতাংশে।
করের পরিমাণ বাড়ায় নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন কমানোর কথা না বললেও উত্তর সাগরে বিনিয়োগ পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শেল এবং বিপি। কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করছে বলেও মন্তব্য করেছে উত্তর সাগরের প্রধান শিল্প সংস্থা অফশোর এনার্জি ইউকে (ওইইউকে)।