রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

বিডিবিএলকে অধিগ্রহণের প্রস্তুতিতে সোনালী ব্যাংক

  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ২.১৯ পিএম
  • ২০ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

ব্যাংক একীভূত করার পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবি পিএলসি, যা বিডিবিএল নামে পরিচিত) অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতি শুরু করেছে সোনালী ব্যাংক।

শুধু বিডিবিএল নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ও কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন সোনালীর কর্মকর্তারা।

সরকারের উচ্চ পর্যায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইঙ্গিত পেয়ে এক বা একাধিক ব্যাংক অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।

বিডিবিএলকে সামনে রেখে অন্যান্য ব্যাংকের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ করে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা, যা তাদের পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে।

সেজন্য সরকারি ছুটির দিন রোববারও প্রধান কার্যালয় খোলা রেখে পুরোদমে দাপ্তরিক কাজ সেরেছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিডিবিএলসহ কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করলে তখন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেজন্য যে ব্যাংকটি আমাদের সঙ্গে মার্জার হবে, তাদের পর্ষদেরও অনুমোদন লাগবে।”

সোনালীর এমডি বলেন, “কোন ব্যাংক একীভূত করব সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা শুধু মার্জার হলে ব্যাংকের কী কী হতে পারে তার ধারণাপত্র পর্ষদকে জানাব।”

অর্থনীতিবিদরা গত কয়েক বছর ধরেই দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ একশন, পিসিএ’ নীতি ঘোষণা করা হয়।

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ডে আর্থিক স্বাস্থ্য নিরূপণ করা হয়।

কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে দুর্বল হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। র্দুবল ব্যাংক টেনে তুলতে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা রেখেছে। সরকারও তাতে সায় দিয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংক, আসলে যেগুলো হয়ত ভালোভাবে চালাতে পারছে না। ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক একীভূত করে দিয়েছি। পদ্মা ব্যাংক করা হয়েছে। ঠিক এভাবে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা কিন্তু বসে নেই, কাজ করে যাচ্ছি।”

দুর্দশায় থাকা পদ্মা ব্যাংক একীভূত হচ্ছে শরীয়ভিত্তিক ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। ইতোমধ্যে ব্যাংক দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়ে চুক্তিবদ্ধও হয়েছে।

ওই চুক্তির পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে মার্জারের আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিডিবিএল অথবা বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার পর্ষদ সভা ডেকেছে সোনালী ব্যাংক। গত মঙ্গলবারও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একটি বৈঠক হয়। পরদিন বুধবার দুর্বলদের কোনো একটি বা একাধিক ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে নির্দেশনা পায় সোনালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে ঈদের আগে চলতি সপ্তাহের দুটি কার্য দিবসের মধ্যে একদিন পর্ষদের সভা ডেকেছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির একজন পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, কোন কোন ব্যাংক অধিগ্রহণ করা যায়, তার একটি সারসংক্ষেপ পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে।

সেই সারসংক্ষেপে শুরুতে বিডিবিএলকে ব্যাংককে ভাবনায় রেখে এগোচ্ছে সোনালী ব্যাংক। পর্ষদ তাতে সায় দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য।

একই দিনে পর্ষদ সভা ডেকেছে বিডিবিএল। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান কাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভায় মার্জার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারটি উপস্থাপন করা হবে। বিডিবিএল কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে কি না তা এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে দুর্বল ব্যাংককে সবলের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।

কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা না হলেও ধারণা দেওয়া হয় যে, ব্যাংকগুলো নিজেদের পছন্দে বাছাই করতে পারবে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে শিল্প খাতের বিকাশে ‘বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক’ ও ‘বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা’ নামে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে না পারায় ২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠান দুটিকে একীভূত করে সরকার। নতুন নাম হয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড বা বিডিবিএল। তখন ব্যাংকটির শাখা সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭টি।

কোম্পানি আইন সংশোধনের পরে নামের শেষে লিমিটেডের পরে পিএলসি যোগ করা বাধ্যতামূলক করায় এখন তা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি।

রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে বিডিবিএলের আর্থিক ভিত্তি ‘শক্তিশালী’ দাবি করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান কাজী বলেন, “আমাদের ব্যাংকের পরিধি খুব একটা বড় না। সারা দেশে মাত্র ৫০টি শাখা। এটি যেমন একটি দুর্বল দিক, আবার এটিই সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। পরিসর ছোট হওয়ায় ঋণ কেলেঙ্কারি নেই। আমরা প্রকৃতভাবেই মুনাফায় আছি।”

বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার আলোচনার মধ্যে গত ৩১ মার্চ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিছুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে কাউকে এখনো নিয়োগ দেয়নি সরকার।

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পারিচালক ও পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে। সাবেক ও বর্তমান আমলাদের মধ্যে থেকেই সাধারণত পরিচালক নিয়োগ করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের বর্তমান সাত সদস্যর পর্ষদের একজন হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইবুনালের সদস্য মতিউর রহমান।

ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামতের বাইরে হয় না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বক্তব্য জানতে সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

‘স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’য় এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হল অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একইসাথে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে।”

নীতিমালায় এক বা একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়।

দুর্বল ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ধীরে ধীরে গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, একীভূত হতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে হবে। সভায় অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর করতে পারবে।

এরপর প্রস্তাব আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে একীভূত প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে ব্যাংক।

‘পিসিএ’ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, চলতি বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো ব্যাংক চাইলে স্বেচ্ছায় অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হতে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।

বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়ার বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের বেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায় ও সম্পদ গ্রহণ করতে দরপত্র দেওয়া হবে পত্রিকায়।

দরপত্রে সাড়া না পাওয়া গেলে বা আবেদনকৃত কোম্পানির সক্ষমতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তুষ্ট না হলে, যে কোনো এক বা একাধিক ব্যাংককে স্কিমের আওতায় এনে যে কোনো ব্যাংককে দায়িত্ব গ্রহণে নির্দেশ দিতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com