শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী : টানা ৭ মাস ধরে সুফল মিলছে না দেশে

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৮.৩৯ এএম
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম টানা ৭ মাস ধরে নিম্নমুখী। নয় বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এত লম্বা সময় ধরে নিম্নমুখিতা অব্যাহত আছে। গত অক্টোবরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক আগের মাসের চেয়ে দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্য দিয়ে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম নয় মাসে সর্বনিম্নে নেমেছে। কিন্তু দেশে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় ও ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা তোলায় ভোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে বিশ্ববাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এখনো এর সুফল দেখা যাচ্ছে না। দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আমদানি করা পণ্যের দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মার্কিন ডলার। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ে। এর সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন। ফলে ভোক্তারা এখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না।

এফএওর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাংস, চিনি, ভোজ্য তেল ও দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু দেশে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮ শতাংশ। এক বছর আগে প্রতিকেজি আটার দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা এখন তা বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকা হয়েছে। একইভাবে ময়দার দাম বছর ব্যবধানে ৬৪.৭৭ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগে প্রতিকেজি ময়দার দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা এখন তা বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা হয়েছে। চালের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬ শতাংশ। এক বছর আগে প্রতিকেজি চালের দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, এখন তা বেড়ে ৬২ থেকে ৭২ টাকা হয়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন গত বছরের তুলনায় সাড়ে ২১ শতাংশ বেশি। এক বছর আগে প্রতিকেজি তেলের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, এখন তা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা হয়েছে। আর চিনির দাম বেড়েছে সাড়ে ৪৫ শতাংশ। চিনির ক্ষেত্রে গত এক মাসেই দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত বছর এক কেজি চিনির দাম ৮০ টাকার মধ্যে থাকলেও সেটি এখন ১১৫ টাকা। গত এক বছরে মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ, অ্যাংকর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, রসুনের দাম ৫০ শতাংশ, শুকনা মরিচের দাম ১১৫ শতাংশ, আদার দাম ১৩০ শতাংশ, গুঁড়া দুধের দাম ৩৭ শতাংশ, লবণের দাম ১৫ শতাংশ, ফার্মের ডিমের দাম ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গত অক্টোবরে এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ১৩৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ১৩৪ দশমিক ৮ পয়েন্ট। গত মার্চ মাসে খাদ্য মূল্যসূচকটি সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। এটি গত মাসে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। মূল্যসূচক কমলেও এখনো সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তার ওপর ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য বিপদ ডেকে আনছে। বিশেষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে এসব দেশ খাদ্য আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর রিজার্ভ সংকট তো রয়েছেই।

ট্যারিফ কমিশন বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণনে পরিবেশক নিয়োগের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় অনুসারে প্যাকেটজাত চিনি ও ডালের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে। প্রয়োজনে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মুনাফার হার নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com