শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
আ’লীগ করার সুফল ১৫ বছরে অবৈধ সম্পদের পাহাড়॥ হেনরী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অবশেষে দুদকের ২ মামলা পরিবারের জিম্মায় মুক্ত হলেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা যমুনা রেলওয়ে ব্রীজ: পরীক্ষামুলক ট্রেন চলাচল শুরু সিরাজগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত সিরাজগঞ্জ পৌর আ’লীগের সহ-সভাপতি ফিলিপস কারাগারে এস আলমের সঙ্গে আর ব্যবসায়ে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে তেল-চিনি কারখানা ঠিকাদারের খোঁজ নেই, ছয় বছরেও শেষ হয়নি ২২ কোটির আইটি প্রকল্পের কাজ নভেম্বরে ১৩ শতাধিক সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি অবৈধ ছিল: হাইকোর্ট আগে সংস্কার, এরপর নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

ভুল তথ্যেআমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নামে অর্থ পাচার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮.২৭ এএম
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

আমদানি এবং রপ্তানিতে দেয়া হচ্ছে ভুল তথ্য। কম দামে আমদানি করে দেয়া হচ্ছে ওভার-ইনভয়েসিং এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে উপস্থাপন করা হচ্ছে আন্ডার-ইনভয়েসিং। অর্থাৎ বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র (এনবিআর) শুল্ক বিভাগ আমদানী কাজে বেশ কিছু অনিয়মের লেনদেন শনাক্ত করেছে। আমদানি এবং রপ্তানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হয়, এটি এখন স্বীকৃত সত্য। অর্থ পাচার হলে দেশের ক্ষতি কী এমন প্রশ্নের জবাব অনেকটা সহজ। যেসব অর্থ পাচার হয় তার অধিকাংশ অবৈধ পথে উপার্জিত অথবা অপরাধের উৎস থেকে অর্জিত। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুসারে, বৈধভাবে উপার্জিত টাকাও অবৈধ পথে বিদেশে নিলে তা অর্থ পাচার।

এ টাকা দেশে থাকলে তা বিনিয়োগ ও ভোগে ব্যবহৃত হতো এবং কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখত। পাচারের ফলে মুদ্রাবাজারে ভারসাম্য ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশ ও জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। আর পাচারের সুযোগ সীমিত হলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রাও (উৎসমুখ) নিয়ন্ত্রিত হতো। কেননা যেকোনো অপরাধের পেছনে থাকে অর্থ; আর এ অবৈধ অর্থের ব্যবহার মনিটর বা চাপে থাকলে ওই অপরাধে কেউ জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে। তাই অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও সুশাসনের দৃষ্টিতে অর্থ পাচারের পথ রুদ্ধ হওয়ার তাগিদ রয়েছে।

দেশের অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়িরা মনে করছেন বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফ্লাইং বা পাচার হচ্ছে। আমদানির কাজে ভুল চালানের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে ওভার-ইনভয়েসিং এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার-ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার হচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এনবিআরের কাস্টমস শাখার সদ্য চালু হওয়া ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট (আরএমইউ) পণ্যের ভুল মূল্য নির্ধারণের এরকম বেশ কয়েকটি উদাহরণ শনাক্ত করেছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, একই মানের একই পণ্যের জন্য প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যায়নে ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছে। তার আরো বলছেন যে কিছু আমদানিকারক তাদের স্বাভাবিক দামের তুলনায় আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য ক্রয়ে অতিরিক্ত দাম দেখিয়েছে।

কিছু সন্দেহজনক লেনদেন কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ বন্ডেড-ওয়্যারহাউস সুবিধার অধীনে আমদানি করা একই পণ্যের দাম এবং বাণিজ্যিক আমদানিতে পণ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন।

আরএমইউর কমিশনার কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা কমলাপুর আইসিডি, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এবং ঢাকা কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে আমদানিকৃত একটি নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্য মূল্যায়নের ভিন্নতার তথ্য খুঁজে পেয়েছি।

তিনি বলেন সফ্টওয়্যার সংগ্রহের জন্য তহবিল না পাওয়া পর্যন্ত আরএমইউ ইউনিটটি ইতিমধ্যে ম্যানুয়ালি ডেটা বিশ্লেষণ শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সারাদেশের সমস্ত কাস্টমস হাউসকে মূল্য সংহত করতে এবং মূল্যায়নের একই পদ্ধতি অনুসরণ করার আদেশ জারি করেছে।

অন্য একজন ঊর্ধ্বতন শুল্ক কর্মকর্তা বলেছেন যে বন্ড সুবিধা উপভোগকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি একই পণ্যের উচ্চ মূল্য দেখায় যা বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা কম দামে আমদানি করে। এই ধরনের অনুশীলন সঠিকভাবে তদন্ত করা হবে কারণ প্রতিষ্ঠানগুলি ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কর্মকর্তারা শূন্য-রেট ট্যাক্স এবং শুল্কের অধীনে আমদানিকৃত পণ্যগুলিকে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি নির্বাচন করতে এনবিআর ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করেছে যাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তাদের ব্যবসায়িক শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) লক করতে পারেন। ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে অন্য কোম্পানিগুলো শুল্ক বন্দর দিয়ে ঝামেলামুক্ত রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য উপভোগ করবে বলে কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। গত কয়েক মাসের আমদানির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, বেশি দামের পণ্য কম দামে এলসি খুলে বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এক লাখ ডলারের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি মাত্র ২০ হাজার ডলারে আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস (আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো) হয়েছে। গত জুলাই মাসে এমন আশ্চর্যজনক প্রায় ১০০টি ঋণপত্র বন্ধ করা হয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

আমদানি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন,আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সঠিক মূল্যে ঋণপত্র খুললে সবাই আমদানি করতে পারবেন। কোনোভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। ৩০-৩৫টি বিলাসী পণ্য আছে, যা আমদানি না করলেই হয়, এমন কিছু পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য কমবেশি দেখিয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা এভাবে পাচার হয়। জিএফআই বলেছে,বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের যত আমদানি-রপ্তানি হয়, এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য ঘোষণায় গরমিল থাকে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত শীর্ষস্থানীয় এবং কমপ্লায়েন্ট করদাতা হিসেবে পুরস্কার পাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ‘বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

তিনি বলেন “রাজস্ব কর্মকর্তারা নিয়মিত করদাতাদের পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে কর-নেট সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করতে পারলে পারলে দেশের অর্থনীরি জন্য উপকার হবে। এমন উদ্যোগ ব্যবসায়িদের ঝামেলার সম্মুখীন না করে মসৃণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।

শুল্ক আইন ১৯৬৯ এর অধীনে, ঝুঁকিগুলি শনাক্তকরণ এবং মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে এবং প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা বিকাশের উদ্দেশ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। “বোর্ড স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সহ সামগ্রিক শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য একটি শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করবে। এ আইনে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক যাত্রী ট্রাফিক পরিচালনা এবং পণ্য, কার্গো বা পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী অন্যান্য সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বিতভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় রিস্ক টার্গেটিং সেন্টার এই ইউনিট দ্বারা তৈরি ও পরিচালিত হবে।

আইনটি বোর্ডকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শুল্ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করার এবং সময়ে সময়ে, আরএমইউ-এর জন্য নিয়ম ও কার্যপ্রণালী প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়েছে। ইউনিটটি সফ্টওয়্যার সংগ্রহ করতে এবং এর সক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য এর অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, স্থানীয় কোম্পানির কাছ থেকে সফটওয়্যার সংগ্রহ এবং অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য আরএমইউ-এর প্রয়োজন ২২ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১২ সালে, এনবিআর একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীয় ইউনিট গঠন করেছিল যা অর্গানোগ্রাম, পূর্ণকালীন কর্মকর্তা, লজিস্টিক সহায়তা, আইনি ব্যাকআপ বা তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতি নির্দেশিকা না থাকায় কনো কাজে আসছে না।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com