আন্তর্জাতিক ডেস্ক॥
পূর্ব সিরিয়ায় শুক্রবার মার্কিন হামলায় অন্তত ১৮ ইরানপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের বিপ্লবী গার্ড এবং তেহরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চালানোর পর এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ তথ্য জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়ার পর্যবেক্ষক।
পর্যবেক্ষণকারী এ সংস্থাটি আরও জানায়, দেইর এজর শহর থেকে ৬২ মাইল (১০০ কিলোমিটার) ইরাক সীমান্তের কাছে আলবু কামালের কাছ পর্যন্ত বিস্তৃত পূর্ব সিরিয়ার বিশাল অংশে চলমান অভিযানে অস্ত্রের ডিপোসহ ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত অন্তত ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধ্বংস করা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী শুক্রবার ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক বিমান হামলা শুরু করেছে। সম্প্রতি ড্রোন হামলায় জর্ডানের একটি ঘাঁটিতে আমেরিকান ৩ সেনা নিহত হওয়ার জেরে এ হামলা চালানো হয়।
গত রোববার ড্রোন হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার জেরে ব্যাপক বিমান হামলার নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন। ইরান-সমর্থিত সশস্র গোষ্ঠীকে এ হামলার জন্য ওয়াশিংটন দায়ী করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের প্রতিশোধ আজ থেকে শুরু হয়েছে। এটি পরিস্থিতি বুঝে আরও হামলা চালানো হবে।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘাত চায় না। কিন্তু যারা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে তাদের সবাইকে এটি জানাতে দিন: আপনি যদি একজন আমেরিকানকে ক্ষতি করেন তবে আমরা প্রতিশোধ নেব।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সদর দপ্তর হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সিরিয়ায় চারটি ও ইরাকে তিনটি ইরানি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ৮৫টি লক্ষ্যবস্তু ছিল। এতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। আর এ হামলা স্পষ্টতই সফল।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, বিমান থেকে এসব হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে বি-১ বোমারু বিমানও ছিল। এসব বিমানে ১২৫টিরও বেশি নির্ভুল নির্দেশিত যুদ্ধাস্ত্র বহন করা হয়।
এ হামলা সিরিয়া সীমান্তবর্তী জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামরিক ঘাঁটিতে ওই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়।
জর্ডানের ঘাঁটিতে ওই হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গ্রুপকে দায়ী করে আসছিল ওয়াশিংটন। এর জবাবে সিরিয়া ও ইরাকে অবস্থিত ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিকভাবে হামলা চালানোর পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে এ হামলা চালতে থাকবে। বিষয়টি আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কুদস ফোর্স এবং সে সঙ্গে তাদের ‘সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে আমেরিকান বাহিনী ‘৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। এ হামলায় বহু যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানও রয়েছে।
সেন্টকম বলেছে, বিমান হামলায় ১২৫টিরও বেশি নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
ইরানি বাহিনী ও তাদের সমর্থিত সশস্র গোষ্ঠীকে যারা মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলায় সহায়তা করেছিল তাদের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং গোয়েন্দা কেন্দ্রের পাশাপাশি রকেট, মিসাইল এবং ড্রোন স্টোরেজ অবকাঠামোতেও হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টকম।