শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

মেট্রো রেলের উদ্বোধন: যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্ত

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭.৩২ এএম
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বেলা ১১টা ৪ মিনিটে উত্তরায় মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে মেট্রো যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ; রাজধানীতে উন্মোচন হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন অধ্যায়।

বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো। পদ্মা সেতুর পর উদ্বোধন হলো বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের।
নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারপ্রধানের ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বুধবার উদ্বোধন হয় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

উত্তরা-মিরপুর এলাকার সর্পিল রেলপথ, সুদৃশ্য স্টেশন এবং ঝকঝকে রাস্তা তাক লাগিয়ে দিচ্ছে চোখে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন দুর্বিষহ দিন পেছনে ফেলে উচ্ছ্বসিত মানুষ। ইতিহাসের অংশীদার হতে প্রতীক্ষায় ছিলেন সবাই।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রভাব সুদূরপ্রসারী ও বহুমুখী।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মেট্রোরেল ঢাকায় তীব্র যানজট সমস্যার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

তার ভাষ্য, ‘ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করার আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ঢাকার মতো চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরেও এই সেবা চালু করতে হবে। তাহলেই ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমবে; রাজধানীর বাইরেও ঢাকার মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’

দেশের অবকাঠামো খাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক জায়েদ বখত।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল এককভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখবে, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা এখনও কেউ করেনি। অনেকেই বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ যোগ করবে, তবে আমার বিবেচনায় মেট্রোরেলের বিষয়টি পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের চেয়ে আলাদা।

‘মেট্রোরেল রাজধানীর দুই-আড়াই কোটি মানুষের সময় সাশ্রয় করবে। মানুষ দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে। বেশি বেশি কাজ করতে পারবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বেড়ে যাবে। মোট কথা, অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে মেট্রোরেল।’

ট্রেনে বসার আসন ৩১২, দাঁড়ানোর ১৯৯৬:

মেট্রো ট্রেনের প্রতিটি কোচ তৈরি হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। জাপানের বিখ্যাত কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি বাংলাদেশের এমআরটি-৬ এর জন্য ২৪টি ট্রেন তৈরি করছে। এগুলোর প্রতিটিতে থাকবে ছয়টি করে কোচ। এর মধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ১৯টি ট্রেন।

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ লাল-সবুজের রঙের ছোঁয়া রয়েছে ট্রেনের কোচগুলোতে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীর চাপ বাড়লে আগামীতে প্রতিটি ট্রেনে আর দুটি করে কোচ যোগ করা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্রেনে কোচ সংখ্যা হবে আট। বিষয়টি মাথায় রেখেই মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মের নকশা করা হয়েছে।

ট্রেনের দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হয় ট্রেইলর কার, যেখানে থাকবেন চালক। এ দুটি কোচের প্রতিটিতে ৪৮ জনের বসে এবং ৩২৬ জনের দাঁড়িয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। আর মাঝখানের চারটি কোচের প্রতিটিতে ৫৪ জন বসে এবং ৩৩৬ জন দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন।

সব মিলিয়ে ছয় কোচের একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এর মধ্যে সব মিলিয়ে বসার সুযোগ পাবেন ৩১২ জন।

মেট্রো স্টেশনে ট্রেনে চড়ার সময় ১ মিনিট:

স্বপ্নের মেট্রো ট্রেনে সাধারণ মানুষের চলাচল শুরু হবে বৃহস্পতিবার। শুরুতে উত্তরা প্রান্ত থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অনেকগুলো স্টেশন থাকলেও কোথাও দাঁড়াবে না ঢাকা শহরের নতুন এই গণপরিবহন। শুরুর দিকে ট্রেনের সংখ্যাও থাকবে বেশ কম।

২০২৩ সালের ২৬ মার্চ পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হবে এ সেবা। তখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রতিটি স্টেশনে ৪৫ সেকেন্ড ট্রেন থামানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের, তবে মানুষের অভ্যস্ততা তৈরির সুযোগ দিতে এ সময় এক মিনিটের মতো করা হতে পারে।

আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও বা আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিরতিহীন যাত্রী সেবা পেতে গুনতে হবে ৬০ টাকা। ১০ মিনিট পরপর ট্রেন আসবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com