রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জ থেকে লুট হওয়া ৩ কোটি টাকা মুল্যের ফার্নেস অয়েল সিরাজগঞ্জে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫ সিরাজগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য হেনরীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ আ’লীগ করার সুফল ১৫ বছরে অবৈধ সম্পদের পাহাড়॥ হেনরী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অবশেষে দুদকের ২ মামলা পরিবারের জিম্মায় মুক্ত হলেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা যমুনা রেলওয়ে ব্রীজ: পরীক্ষামুলক ট্রেন চলাচল শুরু সিরাজগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত সিরাজগঞ্জ পৌর আ’লীগের সহ-সভাপতি ফিলিপস কারাগারে এস আলমের সঙ্গে আর ব্যবসায়ে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে তেল-চিনি কারখানা ঠিকাদারের খোঁজ নেই, ছয় বছরেও শেষ হয়নি ২২ কোটির আইটি প্রকল্পের কাজ নভেম্বরে ১৩ শতাধিক সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়

লক্ষ্মীপুরে বীজ সয়াবিনের বাম্পার ফলন, কমেছে দাম

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১.৪৬ এএম
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

ডেস্ক রিপোর্ট॥

রবি মৌসুমের সয়াবিন চাষের জন্য জমিতে বীজ বপন শুরু করেছেন চাষিরা।

জেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

রবি মৌসুমের সয়াবিন চাষাবাদের জন্য বীজ সয়াবিন উৎপাদন করা হয় ‘খরিফ-২’ মৌসুমে (১৬ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত)। চলতি বছর লক্ষ্মীপুরের চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বীজ সয়াবিন চাষ করা হয়েছে। ফলে গত মৌসুমের  তুলনায় চার গুণ বেশি বীজ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে এবার।

বেশি জমিতে চাষ এবং চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজ সয়াবিনের উৎপাদন অতীতের থেকেও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা ও কৃষি বিভাগ। ফলে দামও একেবারে কমে গেছে। তাই বাম্পার ফলনেও মলিন কৃষকের মুখ।

কৃষকরা বলেন, অন্যান্য বছর বীজ সয়াবিনের দাম বেশি থাকায় চলতি মৌসুমে শুধু বীজ সয়াবিন উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে।

তারা জানিয়েছেন, কৃষকদের কাছে চাহিদার চেয়ে এবার বীজ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে অনেকে বেশি। গত বছর বীজ সয়াবিনের মণ ছিল আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এবার দাম তা কমে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি একরে বীজ সয়াবিন চাষাবাদে খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে,

চলতি খরিফ-২ মৌসুমে জেলায় ৭৮৬ হেক্টর জমিতে বীজ সয়াবিন আবাদ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে গড়ে দেড় মেট্রিক টন করে। সে হিসেবে এবার মোট উৎপাদিত বীজ সয়াবিনের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার মণ। কিন্তু গেল বছর ছিল এবারের চার ভাগের এক ভাগ। গত মৌসুমে জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বীজ সয়াবিন চাষ হয়। উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে সাত হাজার মণ।

কৃষকরা জানান, বীজ সয়াবিন চাষ করা হয় খরিফ-২ মৌসুমে, অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের দিকে। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বীজ সয়াবিন সংগ্রহ করা হয়। এরপর বাজারে এনে রবি মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে এ বীজ বিক্রি করা হয়। খরিফ মৌসুমে চাষ করা সয়াবিন দিয়েই কৃষকরা রবি মৌসুমের সয়াবিনের আবাদ করে থাকেন। এ বীজ থেকে চারা গজানোর শতকরা হার অনেক বেশি। কিন্তু পুরোনো সয়াবিন বীজ থেকে চারা গজানোর হার অনেক কম।

তারা আরও জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বীজ সয়াবিন আবাদ করা হয় রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী এলাকার চরাঞ্চলে। বর্ষা মৌসুমে চরের জমিতে পানি না জমায় ভালো ফলন হয়।

দক্ষিণ চরবংশী এলাকার কয়েকজন কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর কম বেশি জমিতে তারা বীজ সয়াবিন আবাদ করেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে উৎপাদন কম হলেও ভালো দামে বীজ সয়াবিন বিক্রি করতে পেরেছেন। ফলে চলতি বছর বেশিরভাগ কৃষক ভালো দামের আশায় চরের জমিতে বীজ সয়াবিন আবাদ করেন।

চর কাছিয়া গ্রামের কৃষক মো. হারুন বেপরী বলেন, ১২ একর জমিতে চাষ করে প্রায় ২৮০ মণ বীজ সয়াবিন পেয়েছি। গতবারের চেয়ে বেশি জমিতে চাষ করে ফলনও গতবারের চেয়ে বেশি পেয়েছি। কিন্তু বাজারে এবার বীজ সয়াবিনের দাম কম। আড়াই হাজার থেকে সর্বোচ্চ ভালো মানের সয়াবিন চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ফলন বেশি, তাই এবার দাম কম। কিন্তু গেল বছর প্রতি মণ বীজ সয়াবিনের দাম ছিল আট থেকে নয় হাজার টাকা।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার কৃষক মো. দিদার বলেন, চলতি বছর প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ করেছিলাম। ১৫ মণ বীজ সয়াবিন পেয়েছি। নিজের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ রেখে বাকিগুলো বাজারে বিক্রি করতে এনেছি। কিন্তু এবার দাম কম। প্রতি মণ সয়াবিন তিন হাজার থেকে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোল্লারহাট বাজারের সয়াবিন ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ১০ হাজার মণ বেচাকেনা করেছি। চাহিদার থেকে কৃষকদের কাছে সয়াবিনের পরিমাণ বেশি থাকায় দাম কম।

জেলার কমলনগর উপজেলার করুনানগর থেকে রায়পুরের মোল্লার হাট বাজারে সয়াবিন কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, ৬০ মণ বীজ সয়াবিন কিনেছি। গতবারের চেয়ে দাম অনেক কম। এখানকার বীজ সয়াবিন কমলনগর, রামগতি এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে সরবরাহ করি।

বীজ সয়াবিনের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মিরাজ বলেন, সরাসরি ক্ষেত এবং কৃষকদের কাছ থেকে এবার প্রায় ৫০০ মণ সয়াবিন কিনেছি। প্রতি মণ সয়াবিন প্রায় চার হাজার করে মাঠ থেকে কিনে নিয়েছি। এর সঙ্গে পরিবহন এবং শ্রমিক খরচ আছে। কিন্তু বাজারে সয়াবিনের দাম আরও কম। তাই লাভের বদলে লোকসান হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কৃষকরা রবি মৌসুমের উৎপাদিত সয়াবিন পরের বছর বীজ হিসেবেও ব্যবহার করেন। আবার নতুন করে তারা খরিফ-২ মৌসুমে উৎপাদিত বীজ সয়াবিন দিয়ে রবি মৌসুমে চাষ করেন। কয়েক বছর আগেও অন্যান্য জেলা থেকে বীজ সয়াবিন আসত। এখন এ অঞ্চলের কৃষকেরা বীজ সয়াবিন চাষ করছেন। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার আবাদ এবং উৎপাদন বেড়েছে। তাই দামও কমের দিকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com