শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

সংকটেও অগ্রগতি মেগা প্রকল্পে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯.২০ এএম
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

উন্নয়ন প্রকল্পে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়লেও থেমে নেই সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মেগা প্রকল্পের কাজ। চলতি অর্থবছরে সরকার অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট করলেও অগ্রাধিকারভুক্ত ৮টি মেগা প্রকল্পকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। এখানে গাড়ির জ্বালানি ব্যয়সহ ছোটখাটো কিছু ক্ষেত্রে একেবারে সীমিত আকারে খরচ কমানো হলেও মূল প্রকল্প ব্যয়ে হাত দেওয়া হয়নি। এরফলে প্রকল্পগুলোর কাজের গতি থেমে নেই। এদিকে চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চালু হতে চলেছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল।

সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো হলো-পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

সোমবার প্রকাশিত আইএমইডির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব প্রকল্পের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সূচকগুলো বলে দিচ্ছে কাজের অগ্রগতি গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো। মাসিক পরিসংখ্যানেও একই চিত্র দেখানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেল প্রকল্পে শুরু থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এছাড়া সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ। এদিকে চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেট্রোরেল চালুর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলে যেকোন দিন উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের এই প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে উদ্বোধনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে, এ মাসেই উদ্বোধন করা হবে।

এম এ এন সিদ্দিক আরও জানান, শুরুতে সীমিত পরিসরে মেট্রোরেল চলবে। প্রতি ট্রেনে যাত্রী থাকবে ধারণক্ষমতার চেয়ে কম। ট্রেনের সংখ্যাও থাকবে কম। প্রতিটি স্টেশনে বেশি সময় ধরে ট্রেন থামবে। তিন মাস পর থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় ট্রেন চলবে।

গত সেপ্টেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে আমাদের বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এমআরটি লাইন-৬ এ মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন। শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রথম দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে খরচ বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এজন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। বর্তমানে খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। তারা ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা দিচ্ছে। সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৫৩৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও থেমে যায়নি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। শুরু থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৭ হাজার ২১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৬ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

এছাড়া মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর এডিপি বহির্ভূত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ শতাংশ। এছাড়া দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার ১০০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ।

এদিকে কক্সবাজার-ঘুমধুম রেল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক কাজ ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। তেমন কোনো বাধাবিপত্তি নেই। গাড়ির তেলসহ প্রশাসনিক কিছু ব্যয় কমানো হলেও সেটি মূল প্রকল্পে তেমন প্রভাব পড়বে না।’

মেগা প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বৈশ্বিক কারণে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মেগা প্রকল্পগুলোতে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ এর মূল প্রকল্প ব্যয়ে সরকার হাত দেয়নি। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ার কারণে পরোক্ষ কিছু প্রভাব আছে। তবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে তা খুব বেশি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com