মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

সরকার বেসরকারি খাতে ছাড়বে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রি

  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮.৪৩ এএম
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

এফবিডি ডেস্ক॥

জ্বালানি তেল বিক্রির একচেটিয়া অধিকার হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি তেল আমদানি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রির অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বেসরকারি খাত। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে সরকার। বর্তমানে বিপিসির শতভাগ মালিকানাধীন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিলাররা সারা দেশে পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে। এই দাম সারা দেশে প্রায় এক।

শনিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান।

জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেলে সরকার তেলে ভর্তুকি দেয়। এতে পণ্য পরিবহন, ফসল উৎপাদন, কলকারখানাসহ দেশের অর্থনীতি গতিশীল থাকে। তবে খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে সেখানে ভর্তুকি তুলে দেয়া হবে কি না, সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেননি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে বেসরকারি খাতে কৌশলগত পণ্য জ্বালানি তেল ছেড়ে দিলে তাতে জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর আগে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি সমন্বয়ের ক্ষমতা নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এর ফলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে যখন খুশি তখন তেল ও গ্যাসের দাম বাড়াতে পারবে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের উপর থেকে সব ভর্তুকি তুলে নিতেই এমন নীতি নিয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলেও তাদের ধারণা।

গতকাল শনিবারের সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এলএনজি আমদানিতে এখনো নীতিমালায় কোনো বাধা নেই। কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা যদি এলএনজি আমদানি করেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাব।’

এর আগে গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এউপর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি সচিব সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি পরিষ্কার করলেন।

সেমিনারে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা জ্বালানির ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করছি। আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে কোনো কিছু আমরা এই মুহূর্তে নিয়ে আসতে পারব না।’

তিনি বলেন, শুধু জ্বালানি আমদানি নয়, গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি বিক্রি করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। নতুন নীতিমালা প্রণয়ন হলে সব ধরনের জ্বালানি (তেল ও গ্যাস) আমদানি এবং বিতরণ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ব্যয়বহুল হওয়ায় আগামী গ্রীষ্মে দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে।

খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি বেসরকারি খাতে দেয়ার বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এভাবে দিয়ে জনগণের কী লাভ, সেটি বড় প্রশ্ন। বেসরকারি খাতকে ফার্নেস তেল আমদানি করার অনুমতি দেয়া হয়। এউপর বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারা ফার্নেস তেল আমদানি করে লিটারপ্রতি ১৮ টাকা বেশি নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে। এরই নাম কী জনকল্যাণ?’ এমন প্রশ্ন তোলেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেল একটি কৌশলগত পণ্য। বিপিসির কোম্পানিগুলো সারা দেশে তাদের ডিলারদের মাধ্যমে প্রায় একই দামে এটি বিক্রি করে থাকে। যদি বেসরকারি খাতকে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে সারা দেশে জ্বালানি তেলের দামে কারসাজি হবে, পণ্যের গুণগত মান বর্তমানের চেয়ে খারাপ হবে। এ ছাড়া কৌশলগত জ্বালানি পণ্য বেসরকারি খাতে গেলে এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাতে খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র সংকটে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত কনডেনসেট পরিশোধন করে পেট্রল উৎপাদনের জন্য ১২টি বেসরকারি কোম্পানিকে রিফাইনারি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। তাদের বড় অংশই কনডেনসেট পরিশোধন না করে তা সরাসরি পেট্রল পাম্পের কাছে বিক্রি করে দিত।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম জানান, দেশে যেসব প্রকল্প রয়েছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি আমদানিতে বছরে অন্তত ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। গ্যাস আমদানিতে ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, কয়লা আমদানিতে ৫ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ আমদানি এবং তরল জ্বালানি আমদানিতে আরও ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে- এমন প্রচারের বিরোধিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক বদরুল ইমাম। সেমিনারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত এমন তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত ৩৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এই গ্যাসের যথাযথ অনুসন্ধান না করেই প্রচার করা হচ্ছে, দেশে গ্যাস নেই। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারকে জোরদার ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, চাইলেও দেশে রাতারাতি জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করা যাবে না। দেশে জমিস্বল্পতার কারণে অনেক সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রও স্থাপন করা যাবে না। সৌরবিদ্যুতের একটি বড় সমাধান হতে পারে রুফটপ সোলার বা ছাদে সৌরবিদ্যুৎ করা। এটিকে সরকার উৎসাহিত করছে বলেও তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বক্তব্য দেন। এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন, সঞ্চালনা করেন এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহ।

জ্বালানি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন এফইআরবির ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com