স্টাফ রিপোর্টার॥
তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার সাহেবগঞ্জের গুপিনাথপুর গ্রামে একটি টিনের ঘর তুলেছিলেন ইসমাইল হোসেন ও হামিদা বেগম দম্পতি।
সামান্য আয়ে চলত তাদের সংসার।
সেই আয়ের টাকার মধ্যে থেকে কিছু কিছু অংশ বাঁচিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য তিল তিল করে গুছিয়ে ছিলেন নগদ ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পালন করছিলেন ৫টি ছাগল।
হঠাৎ এক মূহুর্তেই আগুনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এই দিনমজুর পরিবারটি। সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।
গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাতে গরুর ঘরে জ্বালানো কয়েলের আগুন থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মূহুর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে গরু-ছাগলের ঘর থেকে পুরো বাড়িতে।
আগুন লাগার খবরে স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে আসলেও তেমন কোন পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার পর তারা ছুটে এসে নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আশপাশে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় তারা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং গরু ছাগলের ঘরসহ পুরো বাড়ি পুড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়ার আগেই আগুনে সর্বস্ব হারান ইসমাইল হোসেন ও হামিদা বেগম।
ঘরে থাকা তিল তিল করে জোগানো গচ্ছিত কষ্টের টাকা ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে ইসমাইল হোসেন আগুনে দগ্ধ হন। তার পরেও রক্ষা করতে পারেন না তার রাখা আমানত। চোখের সামনে স্বপ্ন ভস্মীভূত হতে দেখেও কিছু করার ছিল না তার।
ক্ষতিগ্রস্ত ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গরুর ঘরে জ্বালানো কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
এতে ঘরের আসবাবপত্র, মেয়ের বিয়ের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে গচ্ছিত নগদ টাকাপয়সা সব পুড়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।
গরুর ঘরে থাকা ৫টি ছাগল ছিল। নিজের চোখের সামনে পুরে শেষ হয়ে গিয়েছে, রক্ষা করতে পারিনি।
আগুনের তাপে আমার হাত ও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। চোখের সামনে আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
এক রাতেই সব কিছু হারিয়ে আমি নিশ্ব হয়ে গেলাম।’
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হামিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে দেখি গরু-ছাগল রাখার ঘরসহ থাকার ঘরে আগুন জ্বলছে। মুহুর্তেই সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পরে সব পুড়ে যায়।
মেয়ের বিয়ের জন্য গচ্ছিত টাকা গুলোও পুরে গিয়েছে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই আর।
এখন থাকার মতো কোনো উপায় নেই। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আমার কাছে এখনো কেও আসেনি।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আমার কাছে আসলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।