রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন

সৌখিন পাখি পালনে বেকারদের কর্মসংস্থান

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২.২৪ পিএম
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগ্রহীত

মেহেরপুর সংবাদদাতা॥

মেহেরপুরে শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের আয়ের অন্যতম উৎস এখন বিদেশি সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন। এরইমধ্যে জেলার কয়েক হাজার যুবক বিদেশি প্রজাতির সৌখিন পাখি বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই আবার পাখি পালন সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে।

প্রাণি সম্পদ অধিদফতর বলছে, সৌখিন প্রজাতির পাখি পালনে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এ ব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর বন বিভাগ অধিদফতর বলছে, পাখি পালন করতে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক করতে হবে।

জেলার গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের যুবক পালু মিয়া শখ করে বছর পাঁচেক আগে কয়েক প্রজাতির সৌখিন পাখি কিনে বাড়িতে পালন শুরু করেন। কয়েক মাস পর ওই পাখিগুলো ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটায়। এভাবে পর্যায়ক্রমে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এখন তিনি বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি সৌখিন পাখির পারিবারিক খামার। খামারে রয়েছে লাভবার্ড, ককোটেলবার্ড, বাজেরিকা, প্রিন্স বার্ড, ডায়মন্ড ঘুঘু, অস্ট্রেলিয়া ঘুঘুসহ মোট ১৫ প্রজাতির পাখি। এলাকায় বিভিন্ন মানুষের কাছে পাখি বিক্রি করে বছরে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা।

পাখি পালনকারী পালু মিয়া বলেন, প্রথমে শখ করে পাখি পালন শুরু করি। এলাকায় সৌখিন পাখির ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক পাখি বিক্রি করি। এতে প্রতি বছর খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় করি। যা আমার সংসারেও এটি একটি বাড়তি আয়। আমার কাছে অনেক শিক্ষার্থীরা পাখি কিনতে আসে। তাদের পাখির পরিবেশ ও খাবার সরবরাহ বিষয়ে পরামর্শ দিই। হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি সৌখিন প্রজাতির পাখি পালনও হতে পারে আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম।

সৌখিন খামারি মেহেরপুর শহরের পাভেল মাহমুদ বলেন, ককাটেল জাতের পাখির অনেক দাম এবং চাহিদা অনেক বেশি। এক জোড়া ককাটেল পাখির দাম ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাজরকা জাতের পাখি বিক্রি হয় ৫০০ টাকা জোড়া। তবে মজার বিষয় হলো এ প্রজাতির পাখি বছরে চারবার ডিম দেয়। প্রতিবারে ৫ থেকে ৮টি করে বাচ্চা দেয়। যার বাণিজ্যিক খামার করতে পারলে মোটা টাকা আয় করা সম্ভব।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাহারবাটী গ্রামের সুমন আহমেদ বলেন, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ির ছাদে বিদেশি পাখি পালন করেছে। আমারও শখ হয়। বন্ধুর পরামর্শে আমিও পাখি পালন করি। এখন আমার বাড়িতে প্রায় ১০ প্রজাতির পাখি আছে। পাখির কিচিরমিচির ডাকে সকালে আমাদের ঘুম ভাঙে। অনেকেই আমার পাখি দেখতে আসে। কয়েক প্রজাতির পাখি বছরে তিন বার ডিম দেয়। প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পাখি বিক্রি করি। এতে আমার পড়ালেখার খরচ পরিবারের কাছ থেকে নিতে হয় না। উপরন্তু আমি অনেক সময় পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছি।

সৌখিন পাখির বাণিজ্যিক খামারি আকবর আলী জানান, স্বল্প জায়গা আর অল্প টাকায় সৌখিন পাখির খামার করা যায়। বাড়িতে যেভাবে হাঁস, মুরগি পালন করি। পাশাপাশি সৌখিন পাখি পালন করেও অনেকেই সংসারে বাড়তি আয় করছে। আমার খামার থেকে বিশেষ করে যুবক ও স্কুল শিক্ষার্থীরা বেশি পাখি কিনে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।

গাংনী শহরের সােহেল আহমেদ  বলেন, কয়েকজন প্রতিবেশী বাড়ির উঠান কিংবা ছাদের ওপর বিদেশি পাখি পালন দেখে উদ্বুদ্ধ হই। তিন বছর যাবত আমি পাখি পালন করছি। এ সব পাখি আমার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে অন্য দিকে আর্থিক ভাবেও সহায়তা পাচ্ছি।

মেহেরপুর বার্ড ক্লাবের সদস্য মাজেদুল হক বলেন, সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন করে অনেক যুবক তাদের বেকারত্বের হতাশা দূর করছেন। অনেক শিক্ষার্থী পড়া লেখার খরচ যোগাচ্ছেন। তবে পাখি পালনের যে বিধি রয়েছে তা মেনে পাখি পালন করতে হবে। এজন্য তিনি এসব উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে পাখি পালনের পরামর্শ দেন।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর বলছে, সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এ ব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

জেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা হামিম হায়দার বলেন, পাখি পালন করতে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক করতে হবে। খামারিদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বিদেশি সৌখিন পাখির সঙ্গে কোনো ক্রমেই দেশীয় পাখি পালন বা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না। আমরা সৌখিন পাখি পালনকারিদের তালিকা করে লাইসেন্স করার জন্য এরইমধ্যে তাগিদ দিচ্ছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com