এফবিডি ডেস্ক॥
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে গেল ফেভারিট আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে অপ্রত্যাশিত হারের মুখ দেখে মেসি-ডি মারিয়ারা।
তবে এদিন ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের অষ্টম পেনাল্টি থেকে সফল স্পট কিকে দলকে লিড এনে দেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার। পরপর তিনটি গোল বাতিল হয়েছে আর্জেন্টিনার। এর মধ্যে মেসির একটি, মার্টিনেজের দুটি গোল। প্রথমে ২২ মিনিটে লিওনেল মেসি অফসাইড হন। এরপর ২৭ মিনিটে লাওতারো মার্টিনেজ জালের নাগাল পেলেও ভিআরএ চেকে সেটি বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। এরপর ২৭ মিনিটে আরও একবার মার্টিনেজ বল জালে জড়ান। কিন্তু সেটিও অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় লিওনেল মেসিরা।
প্রথমার্ধের বিরতির পর খেলা শুরু হতেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। আর্জেন্টিনার জালে বল পাঠাল সৌদি আরব। তাও এক বার নয়, দুই বার! খেলায় এখন ২-১ গোলে এগিয়ে সৌদি আরব।
আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে দিল সৌদি আরব:
আর্জেন্টিনা ১ – ২ সৌদি আরব। আর্জেন্টিনারা সমর্থকরা চাইলে চোখ কচলে আরেকবার দেখতে পারেন। তাতে স্কোরলাইন বদলাবে না। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ‘আইকনিক’ এই ঘটনাই ঘটে গেল। পুঁচকে সৌদি আরবের কাছে হেরে ‘হট ফেবারিট’ আর্জেন্টিনা। যার শেষ বিশ্বকাপ নিয়ে এত উন্মাদনা, সে লিওনেল মেসি দশম মিনিটে পেনাল্টি থেকে বল জড়ানো বাদে পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়েই রইলেন। তাতে ৩৬ ম্যাচেই থেমে গেল আর্জেন্টিনার অপরাজেয়-যাত্রা। আর চরম হতাশার হার দিয়ে শুরু হলো আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ।
শুরু থেকেই সৌদি আরবকে বেশ ভালোভাবেই চেপে ধরেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেসব প্রচেষ্টা গোলে অনূদিত হলো কই! উলটো একের পর এক অফসাইডের খাঁড়ায় পড়ে ব্যর্থ হলো মেসি-লাওতারোদের সকল প্রচেষ্টা। তাও, প্রথমার্ধ শেষে আর্জেন্টিনার চালকের আসনেই ছিল, কারণ মেসির সেই পেনাল্টিতে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল তারা।
দুই মিনিটেই সৌদির বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসির বাঁ পায়ের বাঁকানো শটটা আটকে দেন সৌদি গোলকিপার মোহাম্মদ আল ওয়াইস। ছয় মিনিটে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে সৌদির রাইটব্যাক সৌদ আবদুলহামিদ বক্সের মধ্যে ফেলে দেন লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। ভিডিও রেফারির সাহায্যে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। এবার আর মেসিকে গোলহীন রাখতে পারেননি আল ওয়াইস। প্রথম আর্জেন্টাইন এবং ইতিহাসের পঞ্চম ফুটবলার হিসেবে হিসেবে চার বিশ্বকাপে গোল পেলেন মেসি।
এরপরই শুরু অফসাইড-বৃষ্টি! ২২ মিনিটে পাপু গোমেজের পাস থেকে বল জালে জড়িয়ে অফসাইডের খড়্গে পড়েন মেসি। ২৭ মিনিটে আবারও পাপু গোমেজের দুর্দান্ত পাস থেকে লাওতারো মার্তিনেস পেলেন গোল, অফসাইডের কারণে সেটাও বাতিল। ৩৫ মিনিটেও একই কাহিনি, এবার লাওতারো আগেই বুঝেছিলেন, অফসাইড ছিলেন!
দ্বিতীয়ার্ধে কীভাবে অফসাইডে না থাকা যায়, সে পরিকল্পনা এঁটে আর্জেন্টিনা মাঠে নামবে, এমনটাই হয়ত আশা ছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। না, দ্বিতীয়ার্ধে আর অফসাইড নিয়ে তটস্থ থাকতে হয়নি মেসি-দি মারিয়াদের। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার গোলে একটি শটও নিতে না পারা সৌদি আরবের রুদ্রমূর্তি ধারণ করল দ্বিতীয়ার্ধে! ৪৭ মিনিটে ফিরাস আল-বুরাইকানের পাস ধরে ক্রিস্তিয়ান রোমেরোকে এক প্রকার ঘোল খাইয়ে বাঁ পায়ের শটে দূরের পোস্ট কাঁপিয়ে দিয়ে দলকে সমতায় নিয়ে আসেন সালেহ আলশেহরি। গোলের পর সৌদি আরবকে চেনা দায় হয়ে পড়ল! তাদের ভয়ডরহীন উদ্দাম ফুটবলে আর্জেন্টিনা তখন দিশেহারা।
প্রথম গোলের মিনিট ছয়েক পর সৌদি আরবের ‘নাম্বার টেন’ সালেম আলদাউসারি যে গোলটি করলেন, তেমন জাদুকরি গোল লিওনেল মেসির পায়ে দেখে অভ্যস্ত ফুটবলপ্রেমীরা। বক্সের বাম প্রান্তে বলের দখল পেয়ে দারুণ এক টার্নে দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে পিছনে ফেলেন দাউসারি, এরপর ডান পায়ে নেয়া তার অবিশ্বাস্য বাঁকানো শটে হাত ছুঁইয়েও বল রুখতে পারেননি আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দুই গোল হজম করল আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময়ে মেসি, দি মারিয়া, বদলি হুলিয়ান আলভারেসদের সব প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছে সৌদি রক্ষণভাগ। গোলকিপার মোহাম্মদ ওয়াইস তো রীতিমত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর্জেন্টিনার আক্রমণের সব ঢেউ তাতে আছড়ে পড়ল, তবে অতিক্রম করতে পারল না। তাতে লজ্জার হারে বিশ্বকাপ শুরু হলো আর্জেন্টিনার।