ডেস্ক রিপোর্ট॥
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, আস্থা নেই বলেই মানুষ চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ ভারত যাচ্ছে, ব্যাংকক যাচ্ছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে সামন্ত লাল সেন বলেন, রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না। আস্থা নেই বলেই মানুষ চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ ভারত যাচ্ছে, ব্যাংকক যাচ্ছে। রংপুর থেকে মানুষ ঢাকায় আসছে, তার মানে আস্থাহীনতার অভাব। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হলে গ্রাস রুট লেভেলে কাজ করা, যেটি আমি শুরু করেছি মাত্র। আমাকে আরও সুযোগ দিতে হবে। আমি চেষ্টা করছি। আমি পারবো না শতভাগ, তবে আমি চেষ্টা করবো।
সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। আজ এটি নিয়ে শুনানি আছে। যেহেতু বিষয়টি আদালতে রয়েছে তাই এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তাহলে আদালত অবমাননা হয়ে যাবে।
ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, যে তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে এবং হাইকোর্ট থেকে কী রায় দেয়, সেটা আমরা দেখি আগে। তারপর।
তদন্তে কী পেয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্ত আমরা যা পেয়েছি তা গোপনীয়। হাইকোর্টে জমা হয়েছে। যেহেতু হাইকোর্টে প্রক্রিয়াধীন এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বলা মুশকিল।
অনিবন্ধিত হাসপাতালের বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কী থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ এবং লাইসেন্স ছাড়া যে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, আমি এ ব্যাপারে কথা বলেছি। হঠাৎ করে বন্ধ করলে তো হবে না। আমাকে তো পরীক্ষা করতে হবে। আমার কাছে তালিকা এসেছে, আমরা সেই তালিকা ধরে কাজ করবো। কোনো হাসপাতাল অবৈধ কিংবা ইলিগ্যালভাবে কাজ করবে, সেটা অন্তত আমি হতে দেবো না। এ ব্যাপারে আমার কঠোর নির্দেশ।
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, যারা এ ধরনের ক্লিনিক চালাচ্ছেন তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করুন। না হলে আমরা কিন্তু তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবো এবং তাদের একটা সময় দেবো। হঠাৎ করে আমরা একটা ক্লিনিক বন্ধ করতে পারি না। একটা নিয়ম আছে, প্রসিডিউর আছে। আমি সেভাবে এগোবো।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াবেন, আমরা দেখেছি বরাদ্দ ফেরত যায়। বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আপনার পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট সচিব ও ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে বসে একটা বাৎসরিক পরিকল্পনা…। আমরা চিন্তা হচ্ছে যে প্রকল্প এবং যে কার্যক্রম নিলে জনসাধারণের উপকার হবে সে ধরনের প্রকল্প নেবো। অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প নিলাম বা কোনো খাতে খরচ করলাম, সে ধরনের কোনো বরাদ্দ নেবো না যাতে সাধারণ মানুষের কাজে না লাগে।
পরিবার-পরিকল্পনা সামগ্রীর সংকট নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, আমরা ক্রয়-পরিকল্পনা অনেক আগেই অনুমোদন দিয়েছি। ক্রয়-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে রাজস্ব খাতসহ দুই জায়গা থেকেই কেনার কথা বলা হয়েছে। আমরা অপশন দিয়েছিলাম এক জায়গা থেকে কেনা। তারা যে অপশন দিয়েছিল তা অনেক আগেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটার কার্যকম চলছে। সহসাই এই ক্রয়-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ওষুধের যে কাঁচামাল এবং ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচামাল আমরা সবসময় বিদেশ থেকে আনি। মাত্র ৫ শতাংশ কাঁচামাল দেশে তৈরি হয়। সেটার দাম যেমন বেড়েছে, ডলারের দামও বেড়েছে। এরপর দেশে দেশে বিদ্যুতর দাম বেড়েছে, বেতন বেড়েছে। সবকিছু মিলে আমাদের কোম্পানিগুলো বলছে তারা অত্যন্ত অসহায়, বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থা। প্রথম শ্রেণির কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো তারা চলতে পারে না। ডলারের যে দাম বেড়েছে আমরা সে হিসাবে বাড়িয়েছি। আমাদের স্যালাইনগুলোর দাম এত কম যে উৎপাদন করে লাভ করতে পারে না। এ জন্য অনেক কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বাড়তে দেবো না। আমরা কাজ করছি। একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যদি বাড়াতে হয় তাহলে কমিটির মাধ্যমে বাড়াতে হবে।