৯০তম মিনিটে বার্সেলোনার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েও পরে সিদ্ধান্ত বদলান রেফারি, ৯৯ ও ১০২তম মিনিটের গোলে জয়োল্লাসে মাতে ভিয়ারেয়াল।
ডেস্ক রিপোর্ট॥
ম্যাচজুড়ে আক্রমণে আধিপত্য করল বার্সেলোনা। তবে বিরতির আগে-পরে দুবার তাদের জালে বল পাঠাল ভিয়ারেয়াল। ১১ মিনিটের তিন গোলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল কাতালানরা। নাটকীয়তার তখনও ঢের বাকি! শেষ দিকে ওই ব্যবধানও ঘুচে গেল। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে বার্সেলোনার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েও পরে সিদ্ধান্ত বদলালেন রেফারি। সব নাটকীয়তার শেষে, যোগ করা সময়ের দুই গোলে জয়োল্লাসে মাতল ভিয়ারেয়াল।
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার লা লিগার ৮ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচটি ৫-৩ ব্যবধানে জিতল ভিয়ারেয়াল। এই হারে লিগ টেবিলে শীর্ষস্থানের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে রইল বার্সেলোনা।
২০২০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ৮-২ গোলে হারের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে পাঁচ গোল হজম করল বার্সেলোনা।
পুরো ম্যাচে ৭১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য বার্সেলোনা শট নেয় মোট ২২টি, যার ১০টি ছিল লক্ষ্যে। আর ভিয়ারেয়াল ৯ শটের ৬টি লক্ষ্যে রেখেই বাজিমাত করল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা দুই ম্যাচে হারল বার্সেলোনা। গত সপ্তাহে আথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরে কোপা দেল রের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় শাভি এর্নান্দেসের দল।
জয়ে ফেরার আশায় চতুর্থ মিনিটেই দারুণ এক আক্রমণে প্রথম সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে পাস দেন লামিনে ইয়ামাল। ইলকাই গিনদোয়ানের শট বাধা পায় আরেক ডিফেন্ডারের পায়ে।
অষ্টম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে ইয়ামালের শট অনায়াসে ঠেকান ভিয়ারেয়াল গোলরক্ষক ইয়োর্গেনসেন। পঞ্চদশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোয়াও ফেলিক্সের বাঁ পায়ের শটে বল এক হাতে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান তিনি।
২২তম মিনিটে ভিয়ারেয়ালের জেরার্দ মরেনো বার্সেলোনার জালে বল পাঠালেও তার উৎসব থামিয়ে দেন রেফারি। বিল্ড-আপের সময় আলেক্স বায়েনা বার্সেলোনার জুল কুন্দেকে বক্সে ফেলে দেওয়ায় ফাউল ধরেন তিনি। ভিএআরেও বহাল থাকে তার সিদ্ধান্ত।
৪১তম মিনিটে স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় ভিয়ারেয়াল। সতীর্থের থ্রো-ইনে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফরোয়ার্ড সরলথ বক্সে ঢুকে পাস দেন পেনাল্টি স্পটের কাছে। আর প্রথম স্পর্শে বাঁ পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ৩১ বছর বয়সী স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড মরেনো।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। ইয়ামালের ক্রসে দূরের পোস্টে স্লাইডে বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি ডিফেন্ডার রোনাল্দ আরাউহো।
৫৪তম মিনিটে নিজেদের ভুলে আরও পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। জোয়াও কানসেলোর ভুলে বল ধরে বক্সে ঢুকে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে কাটিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বার্সেলোনার সাবেক উইঙ্গার ইলিয়াস আখোমাচ।
৬০তম মিনিটে ব্যবধান কমায় স্বাগতিকরা। দুই মিনিট আগে ফেলিক্সের বদলি নামা ফেররান তরেসের থ্রু বল বক্সে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি রবের্ত লেভানদোভস্কি। পাশেই থাকা গিনদোয়ান বাঁ পায়ের নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন।
৬৫তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন তরেস। বক্সে গিনদোয়ানের হেড পাসে ওয়ান-অন-ওয়ানে বল বাইরে মারেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
৬৮তম মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি নামা পেদ্রি। কুন্দের ক্রস ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেনি সফরকারীরা। বক্সের ভেতর থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রির শট প্রতিপক্ষের একজনের পা ছুঁয়ে জাল খুঁজে পায়।
দুই মিনিট পর এগিয়েও যায় বার্সেলোনা। গিনদোয়ানের ফ্রি-কিকে বক্সে হেডের জন্য লাফিয়ে ওঠেন আরাউহো। বল ভিয়ারেয়ালের ডিফেন্ডার এরিক বেইলির গায়ে লেগে জালে জড়ায়, আত্মঘাতী গোল।
৭৯তম মিনিটে বক্সে ঢুকে ইয়ামালের নেওয়া শট ঠেকান গোলরক্ষক। ৮২তম মিনিটে সুযোগ পান লেভানদোভস্কির বদলি নামা ভিতর খক। তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক।
৮৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন গনসালো গেদেস। সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো বল বক্সের বাইরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভেতরে ঢুকে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
৯০তম মিনিটে গিনদোয়ানের শটে বক্সে ভিয়ারেয়ালের একজনের হাতে বল লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিএআরে মনিটরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান তিনি। টিভি ক্যামেরায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান শাভি।
যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে আবার এগিয়ে যায় ভিয়ারেয়াল। বক্সে অনেক সুযোগ পেয়েও বল ক্লিয়ার করতে পারেননি বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। আলগা বল পেয়ে জাল খুঁজে নেন সরলথ। আর একেবারে শেষ মুহূর্তে স্বাগতিকদের কফিনে পঞ্চম পেরেক ঠুকে দেন লুইস মোরালেস।
চলতি আসরে বার্সেলোনার দ্বিতীয় হার এটি। ২১ ম্যাচে ১৩ জয় ও ৫ ড্রয়ে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
দিনের শুরুতে লাস পালমাসকে ২-১ গোলে হারানো রেয়াল মাদ্রিদ ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। তাদের চেয়ে ২ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে মৌসুমের চমক জিরোনা।
২২ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে ১৪ নম্বরে আছে ভিয়ারেয়াল।