ঝিনাইদহ সংবাদদাতা॥
খরাজনিত কারণে যেমন গাছ থেকে কাঁচা আমের গুটি ঝরে পড়ছে, একই সাথে ফেটে চৌচির হচ্ছে কাঁচা লিচুও। পাকার ২-১ সপ্তাহ আগেই এসব লিচু ফেটে যাওয়ায় যেমন তা আকারে বড় হচ্ছে না, উৎপাদন কমবে, হবে না সুস্বাদু। এমনই মন্তব্য লিচুচাষিদের।
জেলার কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুণ্ডুর বেশ কয়েকটি লিচুবাগানের মালিক ও কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এবার ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় এবং প্রথমদিকে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় লিচুগাছে প্রচুর মুকুল আসে এবং তা দিনদিন বড় হতে থাকে স্বাভাবিকভাবে। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা লক্ষ করছেন, প্রায় প্রতিটি গোছাতেই ২-১টি করে লিচু ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ওইসব ফল আকারে বড় হওয়ার আগেই হালকা লাল রং ধারণ করছে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে পেকে যাবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতে ফলন বেশ কমে যাবে। লিচুচাষি মনিরুল ইসলাম জানলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি গাছের গোড়ায় পানি ধরে রেখে এবং গাছগুলোতে পানি স্প্রে করেও কোনো ফল পাননি। ফলে তার মতো চাষিদের হতাশাই বাড়ছে। তিনি জানান, লিচু চাষ বেশ লাভজনক এবং নগদে বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। এ কারণে চাষিরা লিচু চাষে ঝুঁকছে গত কয়েক বছর। কিন্তু প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে তাদের স্বপ্ন-সাধ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ৪২৮ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৮০ টন লিচু উৎপাদিত হয়। লিচু চাষ বাড়তে থাকায় তা এবার সাড়ে ৪০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে আর উৎপাদনও সাড়ে ৩ হাজার টন হবে বলে তারা ধারণা করছেন।
অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলার উপপরিচালক আসগর আলীর সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলন্ত সবগাছেই পর্যাপ্ত পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। তারা গাছগুলোকে সতেজ রাখতে গাছের গোড়ায় কয়েকদিনের জন্য পানি সংরক্ষণ ও সমস্ত গাছে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে কিছুটা সুফল পাচ্ছেন।
তিনি জানান, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুণ্ডুতে বেশি লিচুর চাষ হয়, যা ওই এলাকার চাষিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। লাভজনক লিচু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ায় ক্রমেই নতুন নতুন জমি লিচু চাষের আওতায় আসছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে ঝিনাইদবাসীকে আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মাগুরা বা মেহেরপুরের লিচুর ওপর নির্ভর করতে হবে না। লিচুর আবাদ বাড়লে রপ্তানিযোগ্য কিছু ফলের ওপর চাপ কমবে বিধায় বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে কিছুটা হলেও, যা দেশেবাসীর জন্য সুখবর।