রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

আলোর ফেরিওয়ালা রাসেল

  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ মে, ২০২১, ১২.২২ পিএম
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে
মো: শাহ্ জোবায়ের ওরফে রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মো: শাহ্ জোবায়ের ওরফে রাসেল, যার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল লাইটিংকে শিল্পে পরিণত করা, যা এখন রূপ নিয়েছে বাস্তবতায়। লাইটিং বা আলোকসজ্জা যে মানব জীবনের জন্য বড় একটি শিল্প হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
এক সময় মনে করা হত, ইলেক্ট্রিক বাল্ব কেবলমাত্র ঘর আলো করার জন্যই ব্যবহার করা হয়। কিন্তÍু এখন সেই ধারণা পরিবর্তন হয়েছে এবং লাইটিং বা আলোকসজ্জা এখন মানব সমাজে শিল্পে পরিণত হয়েছে। লাইটিং বা আলোকসজ্জা এখন বিভিন্ন স্থাপনা যেমন: বাসা-বাড়ী, অফিস, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, ভাস্কর্য্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোতে সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
রাসেলের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় লাইটিং বা আলোকসজ্জা এখন বাণিজ্যকরূপ ধারন করেছে, যা দেশ ও বিদেশে ভীষণভাবে প্রসংশীত হচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠিত হেভেন্স লাইটিং এ ক্ষেত্রে একটি জলন্ত দৃষ্ট্রান্ত।
প্রারম্ভিক:
রাসেলের বড় ভাই শাহ্ জালাল মাসুম ১৯৮০ সালে আল-হেলাল ইলেক্ট্রিক হাউজ নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাইটিং ব্যবসার জগতে যাত্রা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি লাইটিং জগতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেয় কেবলমাত্র সততা ও একনিষ্ঠ্য প্রচেষ্টার দরুন।
দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন শেষে রাসেল উক্ত ব্যবসায় যোগ দেন। তখন তার স্বপ্ন ছিল লাইটিংকে একটি শিল্পে পরিণত করা। তার মতে, এটি কেবলমাত্র একটি প্রয়োজনই নয়, এটি হতে পারে জীবন ও সমাজকে আলোকিত করার একটি বাহন। সেই থেকে তিনি শুরু করেন নানা গবেষণা, যা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
রাসেল দেশের মধ্যে স্থাপন করেন আধুণিক ও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ল্যাবসহ একটি লাইটিং কারখানা। এরপর থেকে তিনি শুরু করেন বিদ্যুৎসাশ্রয়ী উন্নতমানের বাল্ব উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কার্যক্রম।
রাসেলের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে বাজারে আসে এনার্জি+(প্লাস) এবং এলইডি বাল্ব, যা দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে কেবলমাত্র কম দাম ও কম বিদ্যুৎ খরচের জন্য।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের এনার্জি+ এবং এলইডি বাল্ব দেশ ও দেশের বাইরে বিক্রি হচ্ছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের স্থাপনাসমুহে, যা একই সাথে দুর করছে অন্ধকার, ছড়াচ্ছে আলো এবং বাড়াচ্ছে চারপাশের সৌন্দর্য্য।


লাইটিং ডিজাইন বা নকশা:
কমপক্ষে সাতজন উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থাপত্যশিল্পী তার প্রতিষ্ঠানে সর্বদা বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার নকশা প্রণয়নকাজে নিয়োজিত রয়েছেন, যাতে করে দেশের বিভিন্ন খ্যাঁতনামা স্থাপত্যশিল্পে সর্বোচ্চ আলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয় এবং স্থাপনা নির্মাণকারী বা আলোর ব্যবহারকারী যেন স্বল্প খরচে সর্বাধিক আলোর ব্যবহার করতে পারেন এবং সহজেই তার স্থাপনাসমুহে সৌন্দর্য্য বর্ধণ করতে পারেন। বাস্তবিক অর্থে বহু মানুষের মধ্যেই আলোর বা লাইটিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তারা মনে করেন, লাইট বা বাল্ব কেবলমাত্র অন্ধকার দুর করার জন্যই ব্যবহার করা হয়। কিন্ত, এটা সত্য যে, সঠিক ডিজাইন ও আলোকসজ্জা একটি স্থাপনাকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে। সামান্য প্রচেষ্টার দরুন খুবই অল্প খরচে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমুহ যেমন: স্থাপত্যশিল্প, যাদুঘর, ব্রীজ, রেলওয়ে ষ্টেশন, পর্যটন কেন্দ্র এবং সরকারী অফিস আলোকসজ্জা দ্বারা আলোকিত করা যায়। সহজেই ঐসব স্থাপনাসমুহের সৌন্দর্য্য স্বাভাবিক স্থাপনার তুলনায় বহুগুন বিকশিত করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাসমুহের সৌন্দর্য্য কেবলমাত্র দিনের আলোতেই দেখা যায়। কিন্তু, জনগণ রাতের বেলা ঐ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন না। যদি স্থাপনাগুলো সঠিক লাইটিং ডিজইনসহ নির্মাণ করা হয়, তাহলে তার সৌন্দর্য্য দিন ও রাত্রীতে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এজন্য স্থাপনা নির্মানের আগেই সকলের এই বিষয়ে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
কর্মসংস্থান সুবিধা:
হেভেন্স লাইট প্রাইভেট লিমিটেট কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি উম্মুক্ত করেছে বহু বেকার যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের দ্বার। বর্তমানে প্রায় ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে, যারা কোম্পানীর বিভিন্ন শাখায় কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া বেকারত্ব সমস্যা দুরিকরণের লক্ষ্যে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য কর্মসমুহু:
হেভেন্স লাইট এখন একটি বিশ্বমানের লাইটিং কোম্পানী। এটি ইতিমধ্যে চমৎকারসব ডিজাইন এবং আনুসঙ্গিক ইলেক্ট্রিক সামগ্রীসমুহু যেমন: বাল্ব এবং কেবল্স সরবরাহ করে দেশব্যাপী সমাদৃত হয়েছে এবং সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে:-জাতীয় সংসদ ভবনের আলোকসজ্জা, নির্মাণাধীন পদ্মা ব্রীজের ডাইভারসন রোডের আলোকসজ্জা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও সেনাকুঞ্জের আলোকসজ্জাসহ অসংখ্য কাজ।
এছাড়া এনএসআই সদরদপ্তর, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার মনুমেন্ট, দত্তপাড়া মসজিদ, ঢাকাস্থ আমেরিকান হাইকমিশন ও জার্মান হাইকমিশন, এয়ার সদরদপ্তর, নেভি সদরদপ্তর, জাজিরা ক্যান্টনমেন্ট গেইট, আগাখান ফাউন্ডেশন, ইনডিপেনডেন্ট টাওয়ার, সেনা কল্যাণ সংস্থা এবং ৫৬০ মসজিদসহ বহু নির্মাণাধীন স্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে হেভেন্স লাইট এর চমকপ্রদ নকশা।
মিশন:
হেভেন্স লাইট মুলত: স্বল্পমুল্যে উন্নতমানের লাইটিং পণ্য ও সেবা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ কর্মী ও প্রকৌশলীদের সার্বক্ষনিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট ভুমিকা রাখছে।
ভিশন:
পেশাগত দক্ষতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট ব্যবসায় নেতৃত্ব দেয়াই হেভেন্স লাইট এর মুল লক্ষ্য এবং মিশন বলে জানিয়েছেন এর কর্মকর্তাগণ। প্রতিষ্ঠানটি যদি সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তাহলে এটি দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের চাহিদা পুরুনে সক্ষম হবে। কারণ, হেভেন্স লাইট সততার চর্চা ও জনগণের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
মন্তব্য:
এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য হেভেন্স লাইটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) শাহ্ জোবায়ের রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- “আমার ডাকনাম রাসেল। আমার মা বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলের প্রতি অনুরক্ত হয়েই তার নামের অনুকরনে আমার নাম রেখেছিলেন রাসেল। আমি মুজিবপুত্র রাসেলকে দেখিনি। তবে, তার অনেক কথা আমি আমার মায়ের মুখে শুনেছি, আর শুনেই তার ভক্ত বনে গেছি। আমি শুনেছি, রাসেল দেশের জন্য ভাল কিছু করতে নিবেদিত ছিল। আমি তারমতই নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখি লাইটিং জগৎ নিয়ে। আমার প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবিত এনার্জি+ বাল্ব ও অন্যান্য পণ্য সাশ্রয়ী মুল্য ও দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জণ করেছে।
এছাড়া যে সকল স্থাপনা আমাদের সরবরাহকৃত নকশা ও ইলেক্ট্রিক্যাল সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে, তা দেশ ও দেশের বাইরে প্রসংশীত হয়েছে। আমি চাই, দেশের উন্নয়নে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমুহে সৌন্দর্য্য বিকাশে আমাদের অবদান অক্ষুন্ন থাকুক।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 The Daily Sky
Theme Developed BY ThemesBazar.Com